মেয়েদের পাশবিকতা থেকে মুক্তি দিতে শাস্তি বৃদ্ধি : প্রধানমন্ত্রী


কালের কাগজ ডেস্ক:১৩ অক্টোবর-২০২০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস দিবসের আলোচনা সভায় অংশ নেন -ফোকাস বাংলা
ধর্ষকদের পশুর সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মেয়েদের এ পাশবিকতা থেকে বাঁচাতে সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মৃতু্যদন্ডের বিধান যুক্ত করেছে। তিনি বলেন, যেহেতু পার্লামেন্ট সেশন নাই, আমরা অধ্যাদেশ জারি করে দিয়েছি। যেকোনো একটা সমস্যা দেখা দিলে সেটা মোকাবিলা করা এবং সেটাকে দূর করা- এটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস দিবস ২০২০’ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এবার বাংলাদেশে প্রতিপাদ্য হলো ‘দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে সুশাসন নিশ্চিত করবে টেকসই উন্নয়ন’।
বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনে ‘অগ্নিসন্ত্রাসের’ ঘটনা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগও সরকারকে মোকাবিলা করতে হয়। জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। সেটাও কিন্তু আমরা মোকাবিলা করেছি। পাশাপাশি এসিড নিক্ষেপ, সেটাকেও আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। সেখানে আমরা আইন সংশোধন করেছিলাম।
সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে
বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বে ‘দৃষ্টান্ত স্থাপন’ করতে পেরেছে উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ভূমিকম্প, অগ্নিকান্ড, নদীভাঙন ও খরার মতো দুর্যোগ প্রতিনিয়ত আসতেই থাকবে এবং সেগুলো মোকাবিলা করেই বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হবে। সেটা মোকাবিলা করে বাঁচতে হলে আমাদের কী করণীয়-আমাদের সেই কথাটা চিন্তা করে সব সময় পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে এবং আমরা কিন্তু সেটাই করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের আগে দেশে দুর্যোগ মোকাবিলার কোনো প্রস্তুতি ছিল না। ১৯৯৬ সালে যতটুকু আমরা করে গিয়েছিলাম, এর পরে আবারও একই অবস্থা হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর থেকে আমি পদক্ষেপ নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করার আগে ভাবতে হবে। বাংলাদেশ ছোট একটি ভূ-খন্ড, তাও আবার ব-দ্বীপ; তাতে বিশাল জনসংখ্যার বসবাস। এই ব-দ্বীপের ভেতরে প্রায় সাতশ নদী প্রবাহিত। খাল বিলের পানি সেখানে প্রতিনিয়ত যাচ্ছে। এই জায়গায় দুর্যোগ মোকাবিলা করে মানুষকে রক্ষা করা, জানমাল বাঁচানো, তাদের নিরাপদ রাখা এবং তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা- এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কাজ। ২১০০ সাল পর্যন্ত এই ব-দ্বীপটাকে কীভাবে উন্নত করব, আমরা সেই পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। আমরা আমাদের নদীগুলোকে ড্রেজিং করে নাব্যতা বাড়ানো, গভীরতা বাড়ানো, আমাদের খাল, বিল, পুকুর, জলাধার যেগুলো আছে সেগুলো পুনঃখনন করে সেখানে যেন পর্যাপ্ত পানি থাকে, সেই ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে যদি আমরা কৃত্রিম উপায়ে ম্যানগ্রোভ বন তৈরি করতে এবং সবুজ বেষ্টনী করে দিতে পারি, তাহলে জলোচ্ছ্বাস থেকে কিন্তু আমাদের দেশ রক্ষা পাবে। পাশাপাশি আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা পাবে এবং সেদিকে লক্ষ রেখেই কিন্তু আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য এবং বাঁচার জন্য ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ করা, সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার জন্য আমি আহ্বান জানাই। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে মানুষকে যেন রক্ষা করা যায়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার এবং সরকারের নেওয়া ডেল্টা পস্ন্যানের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মো. এ বি তাজুল ইসলাম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসিন বক্তব্য দেন।
এর আগে প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সেরা স্বেচ্ছাসেবক বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নতুনভাবে নির্মিত ১৭ হাজার ৫টি দুর্যোগ সহনশীল ঘর ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন এবং ‘স্ট্যান্ডিং অর্ডার অব ডিজাস্টার’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
বেদেনী নুরুন্নাহার এবং মো. রেজাউল হক সরকারের কাছ থেকে দুর্যোগ সহনশীল বাড়ি পাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করেন। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক কাশফিয়া তালুকদারও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।