কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :১৪ মার্চ, ২০২০,রবিবার।
কুড়িগ্রামে বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আটকের পর এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে জেলহাজতে পাঠিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার দাবি, তাকে ৪৫০ এমএল দেশি মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করা হয়েছে। এ দাবি অস্বীকার করে আরিফুলের স্ত্রী জানিয়েছেন, কোনো মাদক পাওয়া যায়নি। মধ্যরাতে জোর করে বাড়িতে ঢুকে তাকে পিটিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে আরিফুলকে কুড়িগ্রাম শহরের চড়ুয়াপাড়াস্থ বাড়ি থেকে আটকের পর সাজা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
এদিকে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে নির্যাতন এবং মদ ও গাঁজা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে দাবি করে এলাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন এলাকার নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ। শনিবার বিকেলে কুড়িগ্রামের শাপলা চত্বরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনের সমাবেশে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ প্রত্যাহার করে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার মিতুসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অনিয়মের সংবাদ পরিবেশন ও ফেসবুকে দুর্নীতি সংক্রান্ত লেখা পোস্ট করার কারণে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
সাংবাদিকের স্ত্রী মিতু আরও জানান, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে খাওয়া শেষে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় হঠাৎ কে বা কারা দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে আমার স্বামী ফোনে স্বজনদের বিষয়টি জানান। এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে তারা আমার স্বামীকে মারধর শুরু করে। আমি বাধা দিতে গেলে তারা আমাকেও মারতে উদ্যত হয়। পরে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়। কি অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে তখন তারা জানান নি। পরে জানতে পারি তার বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগে এক বছরের জেল দেওয়া হয়েছে। আমার স্বামী কোনো অন্যায় করেনি, আমি ন্যায় বিচার চাই।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দুলাল বোস জানান, আমার জানা মতে সাংবাদিক আরিফুল মদ-গাঁজা তো দুরের কথা কোনো দিন সে একটি সিগারেটও স্পর্শ করেনি। বরং যারা ধূমপান করে তাদের বিভিন্ন সময় তিরস্কার করেছে।
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বিপ্লব জানান, আমরা কুড়িগ্রামের সাংবাদিকরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের একদফা দাবি তাকে দ্রুত মুক্তি দেওয়া হোক।
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাড. আহসান হাবীব নীলু জানান, তাকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই মুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন- কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বিপ্লব, দৈনিক কুড়িগ্রাম খবরের সম্পাদক এসএম ছানালাল বকসী, স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক জাগোবাহের সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, সাংবাদিক শ্যামল ভৌমিক, সাংবাদিক রাজু মোস্তাফিজ, হুমায়ুন কবির সুর্য, হাসিবুর রহমান হাসিব, ইউসুফ আলমগীর, এসএম আশরাফুল হক রুবেল, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদ দুলাল বোস, আরিফুলের প্রতিবেশি আব্দুস ছাত্তার লিটনসহ সাংবাদিকরা।
জেল জরিমানার ঘটনা আইন সংগত কি না জানতে তদন্ত শুরু
এদিকে সাংবাদিককে তুলে এনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কারাদণ্ড ও জরিমানার ঘটনাটি আইনসংগত হয়েছে কিনা এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। শনিবার বিকেলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (রাজস্ব) মো মাসুদ রানার নেতৃত্বে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি তদন্ত শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: গায়ের রক্ত না মুছতেই ফেলে যাওয়া হয় নবজাতকটি
প্রাথমিকভাবে সাংবাদিক রিগ্যানের স্ত্রী, শ্বশুর মোহাম্মদ আলী, মামা নজরুল ইসলাম ও নুর ইসলাম নুরু, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমাসহ সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন বলেন, টাস্কফোর্সের নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিধিবিধান অনুসরণ করে সাজা দেওয়া হয়েছে।