কালের কাগজ ডেস্ক :০২ ডিসেম্বর,রবিবার । ।
একসময় ইনিংস ব্যবধানে হারাটাই ছিল বাংলাদেশের নিয়তি। বড় দলগুলো বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামলেই মাঠ ছাড়তে হতো ইনিংস হারের লজ্জা নিয়ে। একবার দুই নয়, এই লজ্জা পেতে হয়েছিল ৩৮ বার। বিপরীতে প্রতিপক্ষকে ইনিংস ব্যবধানে হারানোর স্বাদ। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সিরিজ সেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান।
অবশেষে মিলল সেই স্বাদ। মিরপুর টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে ২-০তে সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ করে সিরিজ জিতে নিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৫০৮ রান করে টাইগাররা। জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১১১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২১৩ রান করে অল আউট হয়ে যায় ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের দল।
সর্বশেষ চলতি বছরের জুলাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল। দারুণ কৃতিত্ব নিজেদের ১১২তম টেস্টে এসে ঘুরে দাঁড়ালো বাংলাদেশ। এটি টাইগারদের ১৩তম টেস্ট জয়। এর আগে ১২টির কোনটিতে ইনিংস ব্যবধানে জেতেনি বাংলাদেশ। ফলে প্রথমবারের মতো ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বাদ পেল টাইগাররা।
রোববার টেস্টের তৃতীয় দিন ক্যারিবীয়দের দুইবার অল আউট করেছে বাংলাদেশ। একদিনে প্রতিপক্ষের ১৫ উইকেট তুলেছে বাংলাদেশের স্পিনাররা।
এদিন সকাল থেকেই মিরাজ-তাইজুলদের ঘূর্ণির সামনে একে একে হার মানছিল ক্যারিবীয়ান ব্যাটসম্যানরা। সফরকারীদের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই ক্যারিবীয় অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েটকে (১) এলবিডাব্লুর ফাঁদে ফেলেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ তখন মাত্র ২ রান। এরপর কাইরন পাওয়েলকে (৬) আউট করেন মিরাজ। ম্যাচে এটি তার অষ্টম উইকেট।
এরপর দৃশ্যপটে আসলেন তাইজুল ইসলাম। বল করতে এসে নিজের দ্বিতীয় বলেই তুলে নিলেন সুনিল আমব্রিসের উইকেট। এলবিডাব্লুর শিকার হওয়ার আগে ৪ রান করেছেন সুনিল। আর পরের ওভারের চতুর্থ বলে রোস্টন চেজকে (৩) মুমিনুল হকের তালুবন্দি করেন।
লাঞ্চ থেকে ফিরেই আবার উইকেট শিকারে মাতেন মিরাজ। প্রথম সেশনের শেষ দিক থেকেই কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করছিলেন শাই হোপ ও শিমরন হেটমেয়ার। হোপকে আউট সেই প্রতিরোধ ভেঙে দেন মিরাজ। আর তার পরেই উইকেটের থাকা খুললেন নাঈম হাসান। তুলেন নিলেন শন ডোরিচকে।
ডোরিচের বিদায়ের পর হেটমেয়ারের সাথে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন দেবেন্দ্র বিশু। কিন্তু মিরাজের ঘূর্ণির বিষে ৪৭ রানের বেশি এগুতে পারেনি জুটিটি। বিশুকে (১২) সৌম্যর ক্যাচে পরিণত করে ম্যাচে নিজের দশম উইকেট তুলে নেন মিরাজ। এরপর মিরাজের বলে লং অনে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন হেটমেয়ারও।
আর দশ নম্বরে নামা জোমেল ওয়ারিকানকে (০) কট এন্ড বোল্ড করে ১২তম উইকেট তুলে নেন এই অফ স্পিনার। আর শেষ দিকে শেরমন লুইসকে নিয়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ক্রেমার রোচ। দুই জন মিলে ৪২ রানের জুটি গড়ে তোলেন। কিন্তু রোচকে আউট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের ইতি টানেন তাইজুল।
বাংলাদেশের হয়ে ১১৭ রানে ১২ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। এছাড়া সাকিব ৪, তাইজুল ৩ ও একটি উইকেট নিয়েছেন নাঈম হাসান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস) : ৫০৮/১০ (১৫৪ ওভার) (সাদমান ৭৬, সৌম্য ১৯, মুমিনুল ২৯, মিঠুন ২৯, সাকিব ৮০, মুশফিক ১৪, মাহমুদউল্লাহ ১৩৬, লিটন দাস ৫৪, মিরাজ ১৮, তাইজুল ২৬, নাঈম হাসান ১২*; রোচ ৬১/২, লুইস ৬০/১, চেজ ১১১/১, ওয়ারিকান ২/৯১, বিশু ২/১০৯, ব্র্যাথওয়েট ২/৫৭)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (প্রথম ইনিংস) : ১১১/১০, ৩৬.৪ ওভার (ব্র্যাথওয়েট ০, পাওয়েল ৪, হোপ ১০, সুনিল ৭, চেজ ০, হেটমেয়ার ৩৯, ডোরিচ ৩৭, বিশু ১, রোচ ১, ওয়ারিকান ৫*, লুইস ০; সাকিব ৩/২৭, মিরাজ ৭/৫৮, নাঈম ০/৯, তাইজুল ০/১০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (দ্বিতীয় ইনিংস) : ২১৩/১০ (৫৯.২ ওভার) (ব্র্যাথওয়েট ১, পাওয়েল ৬, হোপ ২৫, সুনিল ৪, চেজ ৩, হেটমেয়ার ৯৩, ডোরিচ ৩, বিশু ১২, রোচ ৩৭*, ওয়ারিকান ০, লুইস ২০; সাকিব ১/৬৫, মিরাজ ৫/৫৯, নাঈম ১/৩৪, তাইজুল ৩/৪০)।
ফলাফল : বাংলাদেশ এক ইনিংস ও ১৮৪ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মেহেদী হাসান মিরাজ ।
সিরিজ সেরা : সাকিব আল হাসান।
কালের কাগজ/প্রতিবেদক/জা.উ.ভি