শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:০৯ অক্টোবর-২০২২,রবিবার।
“নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার’ ও ‘নারায়ে রেসালাত, ইয়া রাসুলুল্লাহ’ ‘আজকে মোদের খুশির দিন, প্রিয় নবীর জন্মদিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো শহর। প্রতিটি পাড়া মহল্লা, মসজিদ মাদরাসা, খানকাহ ইয়াতিমখানা, ক্লাব সমিতি থেকে দলে দলে লোকজন সমবেত হয়ে সমস্বরে উচ্চারণ করছেন নাতে রাসুল ও দরুদে নবী সাল্লাল্লাহ। লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে দীর্ঘ প্রায় ৩ কিলোমিটার লম্বা আনন্দ মিছিল (জশনে জুলুস) ঘন্টাব্যাপী প্রদক্ষিণ করে প্রধান প্রধান সড়ক।
উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ আর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মিলাদুন্নবীর আনন্দ মিছিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারত থেকে আগত পীরে কামেল আওলাদে রাসুল খতিবে আযম সৈয়দ কালিম আশরাফ জিলানী। বিশেষ অতিথি ইয়েমন থেকে ফারেগ মাওলানা মুহিবুল্লাহ সিদ্দিকী।
রবিবার (৯ অক্টোবর) ১২ রবিউল আউয়াল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মদিন উপলক্ষে সকাল ৮ টা থেকে শহরের প্রতিটি এলাকা হতে ছোট ছোট মিছিল এসে সমবেত হয় রেলওয়ে মাঠে। বেলা সাড়ে ১০ টায় সম্মিলিত মিছিল বের করা হয়।
এতে প্রায় শতাধিক পিকআপ, ইজিবাইক, ট্রাকসহ পায়ে হেটেই অংশগ্রহণ করেন নবী প্রেমিকরা। মিছিলে বিশেষ অতিথি ছিলেন নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনের এমপি আলহাজ্ব আহসান আদেলুর রহমান আদেল। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় পীর মাশায়েখ, উলেমায়ে কেরাম, বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও খতিবসহ সর্বস্তরের মানুষ।
এতে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে মসজিদের মুসল্লী, খানকাহ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের ব্যানারে প্রায় এক লাখ আশেকরা অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রায় আশেকরা কলেমা খচিত ব্যানার, ফেস্টুন, পতাকা নিয়ে রেলওয়ে মাঠে উপস্থিত হয়। পরক্ষনে সব বয়সের মানুষের সমাগমে রেলওয়ে মাঠ জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
বেলা ১২ টায় রেলওয়ে মাঠে অনুষ্ঠিত হয় মিলাদ, দোয়া মাহফিল। এতে সভাপতিত্ব করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের নীলফামারী জেলা সভাপতি আলহাজ গুলজার আশরাফী, উপস্থিত ছিলেন আন্জুমানে গাউসিয়া আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এর সভাপতি আলহাজ্ব নুরউদ্দিন আশরাফী, সৈয়দপুর সভাপতি হাজী জুবায়ের এমাদি ও সাধারণ সম্পাদক হাজী তাসলিম আশরাফী।
এছাড়াও ছিলেন সৈয়দপুরে জশনে জুলুস আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য মাওলানা রেজওয়ান আল কাদরী, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য রাকিব খান, আল সামস চুন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত সৈয়দপুর থানা সভাপতি হিটলার চৌধুুুরী ভলু, সহ-সভাপতি ফারুক এমাদী, পৌর সভাপতি শফি রেজা।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের পৌর সাধারণ সম্পাদক খালিদ আজম আশরাফী। এতে
হামদ ও নাতে রাসূল (সা.) পরিচালনা করেন আনোয়ার রেজা আশরাফী ও হায়দার আলী এমাদী। শেষে মোনাজাত করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পীরে কামেল আওলাদে রাসুল খতিবে আযম সৈয়দ কালিম আশরাফ জিলানী।
মিলাদুন্নবীর শোভাযাত্রা সফলভাবে পালনে সৈয়দপুর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রায় প্রতিটি মোড়ে মোড়ে এবং সমাবেশ স্থল রেলওয়ে মাঠে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।এজন্য এবং যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর পালনে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান উপস্থিত উলেমায়ে কেরামগন।
উল্লেখ্য বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর পবিত্র জন্মদিন সৈয়দপুরে যথাযথ মর্যাদা আর ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে থাকে। রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখার সাথে সাথে শহরের বিভিন্ন সড়কে নির্মান করা হয় বড় বড় তোরন। মসজিদ মাদ্রাসা পাড়া মহল্লায় করা হয় বিশেষ আলোকসজ্জা। শহরের প্রতিটি মসজিদে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
মূলতঃ ১৯৮১ সালে সৈয়দপুরে প্রথম এই মিলাদুন্নবীর জশনে জুলুস কার্যক্রম প্রচলন করেন শহরের বাঁশবাড়ী খানকাহ কাদেরিয়া তেগীয়ার পীর শাহ সূফী গোলাম জিলানী কাদেরী তেগী। সেই থেকে নিয়মিতভাবে এর আয়োজন করা হয় এবং ক্রমান্বয়ে তা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েতে পরিণত হয়েছে।
প্রতিবছরই এই আয়োজনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তিনি। গতবছর তাঁর মৃত্যুর পর এবারই প্রথম তাঁকে ছাড়া অনুষ্ঠিত হলো জশনে জুলুস। একারনে অনুষ্ঠান স্থলে তাঁকে পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ এবং বিশেষ দোয়া করেন উপস্থিত সকলে। সেই সাথে মোস্তাক রেজভীর প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
ইতোপূর্বে এই আয়োজনে উপস্থিত থাকতেন সাবেক এমপি আলিম উদ্দিন, সাবেক পৌর মেয়র ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকার, সাবেক পৌর মেয়র আখতার হোসেন বাদল। যারা আজ মরহুম। তাদের জন্যও দোয়া করা হয়। বিশাল এ জাশনে জুলুছটি এক নজর দেখার জন্য আশপাশের শহর থেকেও বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয় সৈয়দপুরের প্রধান প্রধান রাস্তাা ও রেলওয়ে ময়দানে। (ছবি আছে)