আবুল হোসেন ,প্রতিনিধি (রাজবাড়ী):২০ মার্চ–২০২০,শুক্রবার।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুকিতে রয়েছে দেশের বৃহৎ রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার যৌনপল্লি। প্রতিদিন এই পল্লিতে অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করে। কে কোত্থেকে আসছে বা থাকছে এর সঠিক কোন তদারকির ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই ঝুকিপূর্ণ হিসেবে মনে করছেন। উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে আমরা সচেতনতা সৃষ্টিতে সর্বত্রই মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করেছি।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের সর্ববৃহৎ দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ আসা যাওয়া করে। সারা বিশে^ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার দিন দিন বেড়ে চলায় যৌনপল্লিতে মানুষের আসা যাওয়া কিছুটা কমেছে। কিন্তু তাদের মাঝে তেমন সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়নি। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ পল্লিতে আসা যাওয়া করছে।
কয়েকজন যৌনকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা পেটের দায়ে এ ব্যবসা করি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ আসা যাওয়া করে। কে অসুস্থ্য আর কে সুস্থ্য এটা নির্ণয় করা তো আমাদের পক্ষে সম্ভবনা। তাই আমাদের কাছে যে আসে তাকেই তো ঘরে তুলতে হয়। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের মতো মরণব্যাধী ছড়িয়ে পড়ায় লোকজনের সমাগম অনেকটা কমেছে। এই রোগ যদি এখানেও ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তো আর আমাদের বাঁচার কোন উপায় নাই। আবার লোকজন আসা যাওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে তখন আমরা চলবো কিভাবে”?
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের স্থানীয় ৫নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও যৌনপল্লির প্রভাবশালী বাড়িওয়ালা আব্দুল জলিল ফকীর বলেন, কিছুদিন আগেও প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে প্রায় চার হাজার মানুষ আসা যাওয়া করতো। কয়েক দিন ধরে করোনা ভাইরাসের কথা শোনার পর মানুষের আসা যাওয়া কমেছে। এ নিয়ে আমরাও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ কখন কার মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলা প্রশাসন থেকে গত দুই দিন মাইকিং করা হলেও এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তেমন কিছু করা হয়নি।
যৌনকর্মীদের নিয়ে সংগঠন মুক্তি মহিলা সমিতির পরিচালক প্রোগ্রাম আতাউর রহমান মঞ্জু বলেন, যৌনপল্লির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংস্থাটি কাজ করে। যেভাবে সারা বিশে^ করোনা ভাইরাসের মতো মরণ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে তাতে করে দৌলতদিয়া যৌনপল্লি সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কারণ দেশের বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য মানুষ এখানে প্রতিদিন আসা যাওয়া করে থাকে। কে কোন রোগ বহন করে এখানে আসছে তা তো কেউ নির্ণয় করতে পারছে না। আমরা সচেতনতা সৃষ্টিতে মুক্তি মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক লিফলেট বিলি ও প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ নিয়েছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসিফ মাহমুদ বলেন, দৌলতদিয়া যৌনপল্লি অবশ্যই ঝুকিপূর্ণ। এ নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। এ ব্যাপারে উপজেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তীতে আরও নির্দিষ্ট কিছু করা যায় কি না সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগ উপজেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, বিষয়টি আমরা জেলা পর্যায়ে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটিতে উত্থাপন করেছি। করণীয় নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত আসলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপাতত আমরা সচেতনতা সৃষ্টিতে গোয়ালন্দ পৌরসভাসহ উপজেলার সবকটি ইউনিয়নের গ্রাম পর্যায়ে মাইকিংয়ে প্রচারণা চালিয়েছি।