রামপ্রসাদ সরকার দীপু ঘিওর(মানিকগঞ্জ) থেকে:৩০এপ্রিল-২০২০,বৃহস্পতিবার।
ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি শিল্প। ধীরে ধীরে প্রযুক্তির কল্যাণে চাষাবাদে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। বর্তমান সরকার কৃষকদের ভতুর্কির মাধ্যমে উন্নত মানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে। সময়ের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার কৃষকদের ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গল- জোয়াল, মই আর হালের বলদ এখন বিলুপ্তির পথে। জমি চাষই নয়, জমিতে নিড়ানি, সার ও কীটনাশক ছিটানো, ধান কাটা, মাড়াই ও ধান শুকানোর কাজে ব্যবহার হচ্ছে অত্যাধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। ফলে এলাকার দরিদ্র কৃষকদের সকল প্রকার ফসল চাষাবাদ করতে সময় কম লাগছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে ধান, শরিষা, ভুট্রা, পাট সহ বিভিন্ন ফসলেরও উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুন। অনেক সাধারন কৃষকদের ভাগ্যের চাঁকা পরিবর্তন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে কৃষিক্ষেত্রে ঘটছে বিপ্লব।
ঘিওর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের কৃষকরা গত কয়েক বছর বিভিন্ন ফসল আবাদ করে তারা ভাল মূল্য পেয়েছে। তবে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করায় এখন নিড়ানি কিংবা আগাছা দমনে শ্রমিকদের প্রয়োজন কমে যাচ্ছে। তারা অতি সহজে পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষাবাদ করছে। ধানকাটা, ধান বোপন করা, ভুট্রা মাড়াই করার কাজেও আধুনিক সকল প্রকার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতোপুর্বে ঘিওরে কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি বিতরন করা হয়েছে। ধান কাটার শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে অর্ধেক ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষকদের ধানকাটা ও ধান মাড়াইয়ের আধুনিক মেশিন বিতরন করা হয়েছে। এই মেশিনের মাধ্যমে কৃষকরা অতি সহজেই জমির ধান মাড়াই ও ধান বস্তাবন্দি করতে পারবেন। এতে তাদের সব কিছুই সাশ্রই হবে।
গত সোমবার দুপুরে সরকার কর্তৃক কৃষি যন্ত্রপাতিতে উন্নয়ন সহায়তা প্রদান কার্যক্রমের আওতায় ২টি কম্বাইন হারভেস্টার বিতরন করা হয়েছে। ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ বিপুল হোসেনের সভাপতিত্বে উপজেলার পয়লা এবং বড়টিয়াতে ২টি কম্বাইন হারভেস্টার বিতরন করা হয়েছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাজেটের আওতায় উন্নয়ন সহায়তা প্রদানের লক্ষে বরাদ্দকৃত দ্বিতীয় কম্বাইন হারভেস্টার ধানকাটা ও ধান মাড়াইয়ের জন্য আধুনিক মেশিন বিতরন করা হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশিক্ষন কর্মকর্তা (ডিএই) আবু মোঃ এনায়েত উল্লাহ, মানিকগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কৃষিবিদ আশরাফ উজ্জামান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।
উপজেলার কাহেতারা গ্রামের কৃষক নূরু মেম্বর জানান,জমিতে চাষাবাদে এখন আর কাঠের লাঙ্গল ব্যবহার হয়না। লাঙ্গলের জায়গায় এখন ব্যবহার হচ্ছে ট্রাক্টর। আগাছা দগন, বীজ বপন ও ফসল কাটতে সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করে বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমিক আনা হতো। কৃষাণ দিয়ে এক বিঘা জমির ধান কাটতে আগে প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হতো। আর বর্তমানে রিপার দিয়ে কাটতে প্রতি বিঘায় খরচ হয় ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। সময় লাগে কম এবং টাকা খরচ হয় কম। ট্রাক্টর দিয়ে চাষাবাদ করতে প্রতি বিঘায় জমিতে ৫শ’ ৫০ টাকা দিতে হয়। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন এলাকার সাধারন কৃষক। ফলে গ্রাম বাংলার কৃষি জমি চাষাবাদে ব্যাপক পরিবর্তন শুরু হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শেখ বিপুল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলাতে মোট ৬ হাজার ৬শ’ ১৫ হেঃ জমিতে বোরো আবাদ এবং আউস ৩শ’ হেঃ জমিতে আবাদ করা হয়েছে। শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় উপজেলায় কৃষকদের সুবিধার্তে এই ২টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কম্বাইন হারভেস্টারের দাম ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা । সরকার ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা ভর্তূকি দিচ্ছে। আর কৃষককে দিতে হচ্ছে বাকি ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বোরো আবাদ হয়েছে বেশি। পর্যায়ক্রমে আরো মেশিন বিতরন করা হবে বলে তিনি জানান।