কালের কাগজ ডেস্ক:২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯,বুধবার।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে খালেদা জিয়াকে ‘মিথ্যা’ মামলায় সাজা দিয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত কারাগারে আটকে রেখেছে। তাকে সুচিকিৎসা না দিয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, কারাগারে যাওয়ার সময় খালেদা জিয়া হেঁটে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হেঁটে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এখন তিনি কারও সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে ও চলতে পারেন না। তার দুই কাঁধে ব্যথা বৃদ্ধি পেয়েছে। হাঁটুর ব্যথা বেড়ে গেছে। প্রচণ্ড ব্যথা ও কাঁপুনির জন্য তিনি হাত দিয়ে কিছু ধরেও রাখতে পারছেন না। এছাড়া তার ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগ বেড়েছে।
অবিলম্বে দেশনেত্রীর সর্বোত্তম সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। এতে কোনো কালবিলম্ব করা যাবে না। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
গত বছরের ৯ নভেম্বর থেকে খালেদা জিয়ার শারীরিক কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি আদালতের নির্দেশে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা খালেদা জিয়াকে কারাগারে গিয়ে দেখেছেন। গত তিন মাসে তার রক্ত পরীক্ষা, এক্সরে থেকে শুরু করে শারীরিক কোনো পরীক্ষাই করা হয়নি। এটি দেখে চিকিৎসকরা অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন যে রোগগুলোতে ভুগছেন তা অত্যন্ত মারাত্মক। তার বয়স ৭৩-এর পথে। এ বয়সে এ রোগগুলোর যদি নিয়মিত চিকিৎসা না হয়, প্রতিদিন যদি মনিটর না করা হয়, তাহলে তার জীবনের প্রতি মারাত্মক হুমকি এসে যেতে পারে। গত তিন মাসে দেশনেত্রীর হৃদরোগ, লিভার কিংবা কিডনির কোনো পরীক্ষা করা হয়নি।
যা নিয়মিতভাবে করা অত্যন্ত জরুরি ছিল।
চিকিৎসার অভাবে খালেদা জিয়ার কিছু হলে এ সরকারকে সব দায়-দায়িত্ব নিতে হবে বলে হুশিয়ারি দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, অবিলম্বে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
তার চিকিৎসার জন্য বাড়তি খরচ হলে বা তার চিকিৎসার সব খরচ বহন করতে বিএনপি রাজি বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে দেখছি, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। তার যে অসুখ, তা অত্যন্ত মারাত্মক। তার নিয়মিত সুচিকিৎসা প্রয়োজন। এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। খালেদা জিয়া কোনো সরকারের কাছ থেকেই এ ধরনের আচরণ পেতে পারেন না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, চার মাস ধরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আত্মীয়, আইনজীবী ও দলীয় নেতাদের দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। আগে সপ্তাহ পরপর স্বজনদের দেখা করতে দিলেও তা এখন সীমিত করা হয়েছে।
সরকার পরিকল্পিতভাবে তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে একটার পর একটা ‘ষড়যন্ত্র’ করে যাচ্ছে। জামিন পাওয়ার পরও তাকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। যে মামলাগুলো একের পর এক দেয়া হয়েছে- এর কোনোটারই কোনো ভিত্তি নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ ধরনের আচরণ দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে করা হবে- এটা সাধারণ মানুষ ও দেশবাসীর কল্পনারও বাইরে, এটা ধারণারও বাইরে। গণতন্ত্রের এ নেতাকে প্রতিটি মানুষ ভালোবাসে, যিনি কখনও কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। সেই নেত্রীকে এভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
আমরা বারবার বলেছি, এ ধরনের আচরণ কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, কাম্য হতে পারে না। তিনি বলেন, দেশনেত্রী মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। তিনি সারাজীবন ব্যয় করেছেন এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
তিনি সেই প্রধানমন্ত্রী যিনি দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন, নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। আজ যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন আমরা দেখছি তার ভিত্তি স্থাপন করার ব্যাপারে তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।
কালের কাগজ/প্রতিবেদক/জা.উ.ভি