Logo
ব্রেকিং :
ঘিওর ও শিবালয়ে স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা সিংগাইরে মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় ডিবি পুলিশের এসআই সহ ৬ জন আহত । হেরোইন সহ ২ জন গ্রেফতার ফরিদপুরের নগরকান্দায় নির্মানকালে ভেঙ্গে পড়লো ব্রীজ আদমদীঘিতে দুই মাদক সেবির তিন মাসের কারাদণ্ড বগুড়া আদমদীঘিতে পানিতে পড়ে শিশুর মৃত্যু নেত্রকোনায় ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশের মতবিনিময় সভা নেত্রকোনায় জেলা প্রশাসনের ভিডিও কনফারেন্স মানিকগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)র অভিযানে হেরোইন ও ইয়াবাসহ ২জন গ্রেফতার দৌলতপুরে স্বাধীনতা দিবসে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় পিআইওসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
নোটিসঃ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : আলহাজ্ব এ.এম নাঈমূর রহমান দূর্জয় ,সম্পাদক ও প্রকাশক মো: জালাল উদ্দিন ভিকু,সহ-মফস্বল সম্পাদক মো: জাহিদ হাসান হৃদয়

ঘিওরে ধানের বাম্পার ফলনও চোখে মুখে হাঁসি নেই বোরো চাষিদের

রিপোর্টার / ২৫ বার
আপডেট শনিবার, ৬ জুন, ২০২০

রামপ্রসাদ সরকার দীপু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট: ৬ জুন-২০২০,শনিবার।
মানিকগঞ্জের ঘিওরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ধানের দাম কম থাকায় এলাকার হাজার- হাজার কৃষকের চোখে মুখে হতাশার ছাপ দেখা দিয়েছে। তাদের চোখে মুখে আর হাঁসি নেই। এলাকার অসহায় দরিদ্র কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম আর অনুকুল আবহাওয়ার কারণে এবার সারা দেশের মত ঘিওরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এই বাম্পার ফলনই কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। সার,বীজ,কীটনাশক, আগাছা দমন, মাড়াই সহ প্রতিমন ধানের উৎপাদন খরচ প্রায় ৮শ’ টাকা থেকে ৯শ’ টাকা হলেও বর্তমানে ঘিওর হাট বাজারে প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে ৭শ’ ৫০ টাকা থেকে ৮শ’ টাকায়। প্রতিমন ধানে সব মিলিয়ে প্রায় ২শ’ টাকা লোকসান যাচ্ছে। সারা বছর কঠোর পরিশ্রম করে কৃষক ফসল ফলায় কিন্তু কৃষক তার ন্যায্য দাম পায়না।
প্রতি বছর স্থানীয় এক শ্রেণির অসাধু, অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী ও দালালচক্র কৃষকদের এই অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে ধানের বাজার নিয়ন্ত্রন করছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পরিবেশ অনুকুলে থাকায় সাধারন কৃষকেরা ধান চাষ করে একটু লাভের আশা করেছিল। কিন্তু ধান কাটার শুরু হতেই তাদের আশা নিরাশায় পরিনত হচ্ছে। ধানের দর পতনের ফলে প্রান্তিক ও বর্গাচাষিরা পরেছে মহাবিপদে। ধান চাষের আগে এলাকার অধিকাংশ কৃষক চড়া সুদে এনজিও ও ব্যাংক ও সুদে টাকা ঋণ নিয়ে চাষাবাদ শুরু করে। চলতি মৌসুমে ধান কাটার শুরুতেই ঋণের টাকার চাপ, শ্রমিকের মুজুরি পরিশোধের চাপে বোরো ধানের ক্ষেত থেকেই ধান পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বোরো ধানের ভরে গেছে মাঠ।
করোনা ভাইরাসের কারনে শ্রমিক সংকটের কারনে অনেেেকই ধান কাটতে পারছেনা। একজন শ্রমিক প্রতিদিন তিন বেলা খাবারসহ ৬শ’ ৫০ থেকে ৭শ’ টাকা মুজুরি দিতে হয়। কৃষকের শুধু ধান কাটতেই খরচ হয় প্রায় ৮শ’ টাকা। অন্যান্য খরচতো আছেই। ফলে এলাকার হাজার হাজার কৃষক ধানের দাম কম থাকায় কৃষক ধান বিক্রি করে তাদের ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছেনা। তার উপর ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার খরচসহ সংসারের যাবতীয় খরচ চালাতে তারা মারাত্মক হিমশীম খাচ্ছে।
উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের আজাহার, ঠান্ডু ,নজু মোল্লাসহ অনেক কৃষক জানান, প্রতি বিঘায় ২৫/৩০ মন ধান পেয়েছি। কিন্তু ধানের দাম না থাকায় আসল টাকাতো দুরের কথা এবার অনেক টাকা লোকসান হবে। বড়কৃষ্ণপুর গ্রামের আদর্শ কৃষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, ধানের ফলন ভাল হয়েছে। আমি প্রায় ২ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। কীটনাশক, সেচ, হাল দেওয়া, আগাছা দমন, ধান মাড়াই ও কাঁটাসহ প্রতি মন ধানে প্রায় ৭/৮শ’ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে প্রতি মন বোরো ধান ঘিওর হাটে বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ টাকা থেকে ৯শ” টাকা। কাজেই এবার ধানে বেশি লাভ হবেনা । কাহেতারা গ্রামের কৃষক সাকাওয়াত জানান, ৪ বিঘা জমি ভাড়া করে বোরো আবাদ করেছি। প্রতি মন ধান উৎপাদন করতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় সারে ৭শ’ টাকা। বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে মাত্র সারে ৮শ’ টাকা। কোন মতো খেয়ে বেচে আছি। পাবনা থেকে ধান কাটতে আসা শ্রমিক বকুল , শাজাহান, রফিক তারা জানান, প্রতিদিন ৬শ’ টাকা রোজ হিসাবে তারা বোরো ধান কাটছে। এর পরে তিন বেলা খাবার সহ সব খরচ জমির মালিক দেন। হাতে তাদের প্রচুর কাজ। এর পরে হিজুলিয়াতে ৬শ’ টাকা রোজে কাজ করবেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় তাদের এবার রোজগার ভাল বলে তারা জানান।
উপজেলা কৃষি অফিসার শেখ বিপুল হোসেন জানান, গত বছর উফশী ৬ হাজার ৩শ’ ৯৫ হেক্টর এবং হাইব্রিড ২শ’ ২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে উফশী জাতের ধান ৬ হাজার ৪শ’ ৩০ এবং হাই ব্রিড ১শ’ ৮০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে আবাদ বেশি হয়েছে। এ বছর আবাদকৃত বিভিন্ন জাতের ধানের মধ্যে রয়েছে উফসি, স্থানীয় এবং হাইব্রিড প্রজাতির ধান। সব চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে ব্রি-ধান-২৮ ও ব্রি-ধান ২৯, ৫০, ৫৯, ৬২, ৬৩, ৬৪ ও ৭৪। হ্ইাব্রিড এসএলবিএইচ,হীরা, তেজ,পাইডনিয়ার ও জাগরন । এ ছাড়া আবাদ করা হয়েছে উন্নত জাতের ব্রি-ধান ৫৮। তিনি আরো বলেন,বোরো ধানের দাম কম থাকায় আমরা কৃষকদের ধান ভাল ভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিওয়া হচ্ছে। যাতে ধান তারা পরে বিক্রি করতে পারে। ঘিওরে এবার প্রায় ১৬টি ধান কাটার মেশিন দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো দেওয়া হবে। তখন ধান কাটার শ্রমিক প্রয়োজন হবেনা। অল্প খরচে কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে পারবে। এবার পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকার দরুন চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ ভাল হয়েছে। সরকারিভাবে সারা দেশে ধান ক্রয় শুরু হয়েছে।
ঘিওর বাজারের ধান ব্যবসায়ী মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, বর্তমানে ভাল বোরো ধান প্রতিমন ৮শ’ থেকে ৮শ’ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় বাজারে ধানের দাম কমে গেছে। তবে সরকারি ভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করলে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে।
এ দিকে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘিওরে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় শুরু হয়নি। এলাকার সাধারন কৃষকদের প্রাণের দাবি, দালাল, ফড়িয়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান না কিনে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে তা হলে সরকারের মহৎ উদ্যোগ শুষ্ট ও সুন্দর হবে। এদিকে ধান ক্রয় এবং মনিটরিংয়ের একটি কমিটি আছে। কয়েক দিন আগে ধান ক্রয় সংক্লান্ত একটি মিটিং করলেও এখনও ধান ক্রয় শুরু হয়নি বলে জানা গেছে।


এ জাতীয় আরো খবর
Theme Created By ThemesDealer.Com