মোঃ সাইফুল ইসলাম ঘিওর(মানিকগঞ্জ)থেকে:২৪ জুলাই,২০১৯,বুধবার।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও বর্ষার শুরুতেই মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলা সদরের ঈদগা মাঠের নৌকা বিক্রির হাট জমে উঠেছে।
মানিকগঞ্জে পদ্মা, যমুনা, ধলেশ^রী, কালীগঙ্গা, ইছামতিসহ বিভিন্ন নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পাওযায় ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয় , হরিরামপুর, সাটুরিয়াও সিংগাইর উপজেলাতে বহু এলাকার নিমাœঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তাই বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই এসব এলাকাতে নৌকা তৈরি এবং বিক্রির ধুম পরে গেছে। ঘিওর , দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ২০/২২ টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত নি¤œাঞ্চল বর্ষার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় নৌকার কদর বেড়ে গেছে বহুগুন। দুর্গত এলাকার লোকজন নৌকার হাটের জন্য বিখ্যাত দেড়শ বছরেও ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাটে ভিড় করছেন নৌকা কিনতে। তবে এ শিল্পের সাথে জড়িত লোকজন শত-শত নৌকা বিক্রির জন্য সাজিয়ে রেখেছে নৌকা হাটায়। অনেকে এ মৌসুমে নৌকা বিক্রি করে তাদের জীবন যাত্রার মান বদলে গেছে।
মানিকগঞ্জের ঘিওর, দৌলতপুর, হরিরামপুর দুর্গম চর এলাকায় নৌকা ছাড়া চলাফেরা করা সম্ভব হয়না। তাই বর্ষা আসার আগেই ঘিওর, দৌলতপুর এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কাঠ মিস্ত্রিরা নৌকা তৈরি এবং মেরামতের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের মানুষের মালামাল এবং জীবন জীবিকার একমাত্র বাহন হিসাবে নৌকার ব্যবহার দীর্ঘদিনের। বর্ষা কবলিত এলাকার লোকজন পারাপারে পুরোদমে ব্যবহার হচ্ছে নৌকা। নৌকা তৈরির শিল্পীরা প্রতি বুধবার জেলার ঐতিহ্যবাহি ঘিওর হাটে নৌকা বিক্রির জন্য আসে। নৌকা তৈরি সাথে জরিত শিল্পীরা স্থানীয় উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করছে নৌকা। ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয়, হরিরামপুর এলাকার নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মিস্ত্রি পাড়ার নারী পুরুষ।
বর্ষার আগমনে মানিকগঞ্জের ঘিওর, দৌলতপুর, হরিরামপুর ,শিবালয়, বেশ কয়েকটি এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। রাস্তাঘাট ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেছে। এই সব অঞ্চলের লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র বাহন হয়ে উঠে নৌকা। হাজার হাজার ধরনের ছোট বড় নৌকা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ঘিওর বাজারে কাঠ মিস্ত্রি পাঞ্জু শাহ, মাসুদ নিরঞ্জন সুত্রধরসহ অনেক মিস্ত্রিরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই তারা তাদের কর্মচারিদের নিয়ে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রতি সপ্তাহে তাদের কারখানায় ২০ থেকে ২৫টি নৌকা তৈরি হয়। ঘিওর, দৌলতপুর, হরিরামপুর, দৌলতপুর এবং মহদেবপুর হাট বাজারে বিক্রি করে। বর্তমানে লৌহা কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকা তৈরির খরচ বেড়ে গেছে। নৌকা প্রকার ভেদে প্রতিটি নৌকা ৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত একটি নৌকা বিক্রয় করা হয়। তবে লাভের অংশ আগের থেকে কমে গেছে। কাঠ মিস্ত্রি সুবল সুত্রধর জানান, আমাদের বাপ দাদাদের আমল থেকেই আমরা নৌকা তৈরি করে বিক্রি করি। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে আদাদের বাড়িতে নৌকা তৈরি ধামধুম শুরু হয়। আমরা জৈষ্ঠ মাস থেকে নৌকা তৈরি শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। বর্তমানে এলাকায় ছোট ডিঙ্গি ও কোষা নৌকা বেশি চলে। তবে কড়ই, জাম্বল,আম,ও কদম কাঠের নৌকা বিভিন্ন হাট বাজারে বেশি চলে। জাতি কাঠের তৈরি নৌকায় অনেক খরচ হয়। তবে এ পেশার সাথে জড়িত লোকজনের তেমন কদর নেই। উপজেলার বানিয়াজুরি, বালিয়াডাঙ্গি, সিংজুরি, বেগুন নারচি, হিজুলিয়া, ঠাকুরকান্দি, বেগুন নারচি, দৌলতপুর উপজেলার জিয়নপুর,বাচামারা, বাঘুটিয়া,খলসি,ধামস্বর, কলিয়া, বিনোদপুর, এবং শিবালয় উপজেলার জাফরগঞ্জ, উথুলি, মহাদেবপুর এলাকার নি¤œঞ্চলের বর্ষার একমাত্র বাহন নৌকা। হাট বাজারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকা বিক্রি হয়। ঘিওর হাটে নৌকা বিক্রি করতে আসা নিরঞ্জন সুত্রধর জানান, তিনি এ বছার ২৫টি নৌকা তৈরি করেছেন। ছোট ছাইজের ডিঙ্গি নৌকা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা এবং মাঝারি ছাইজের নৌকা ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার এবং বড় সাইজের নৌকা ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। চলতি মৌসুমে ্এখনও তেমন বিক্রি শুরু হয়নি। পানি বাড়লে কেনাবেচা হবে । তবে শুরুতেই এবার নৌকার দাম একটু বেশি। তিনি আরো বলেন, আধুনিকতার ছোয়ায় এ পেশার লোকজন অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। তবে বাপ দাদার পৈতিক পেশার কারনে অনেক বহু কষ্টে টিকে আছে। তবে সরকারি পৃষ্টপোষকতায় এ শিল্পের সাথে জড়িত লোকজনকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। তা না হলে অচিরেই হাড়িয়ে যাবে এ পেশার সাথে জড়িত লোকজন।
কালের কাগজ/প্রতিনিধি/জা.উ.ভি