Logo
ব্রেকিং :
গোয়ালন্দে জাটকা সংরক্ষণে পদ্মায় নৌ  র‍্যালী ও জেলেদের শপথ সার্ভিক্যাল রোগে আক্রান্ত সাদিয়ার চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন- দুর্জয় কেন্দুয়ায় হ্যান্ডট্রলির ধাক্কায় শিশুছাত্রের মৃত্যু দৌলতদিয়া পদ্মা নদীর তীর থেকে অজ্ঞাত যুবকের অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার ভাইরাল কিংবা ভিউয়ের জন্য গান করি না— ক্লোজআপ ওয়ান তারকা সাজু এটি প্রথম আলোর ষড়যন্ত্র: হানিফ প্রতিনিয়ত পত্রিকাটি মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করছে : বিপ্লব বড়ুয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক সাংবাদিকদের মুক্তির দাবিতে মানিকগঞ্জে মানববন্ধন নেত্রকোনায় ত্রান ও পুর্নবাসন শাখার আয়োজনে কর্মশালা নতুন শিক্ষাক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে -অঞ্জনা খান মজলিশ
নোটিসঃ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : আলহাজ্ব এ.এম নাঈমূর রহমান দূর্জয় ,সম্পাদক ও প্রকাশক মো: জালাল উদ্দিন ভিকু,সহ-মফস্বল সম্পাদক মো: জাহিদ হাসান হৃদয়

জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও ঘিওরে ভাষা সৈনিক কমরেড আঃ হাকিমের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি

রিপোর্টার / ২৭ বার
আপডেট রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

রামপ্রসাদ সরকার দীপু ,ঘিওর(মানিকগঞ্জ) থেকে:১৬ ফেরুয়ারী-২০২০,রবিবার।
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে প্রবীণ শিক্ষাবিধ ও ভাষা সৈনিক আব্দুল হাকিম মাস্টার। নিভৃত পল্লীর এ ভাষা সৈনিককে রাষ্ট্রীয়ভাবে আজও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে দুঃখ দারিদ্যের কষাঘাতে বিপর্যস্থ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা সদরে বর্তমানে তার বসবাস। তবে দীর্ঘদিনেও তার ভাগ্যের কোন উন্নত্তি হয়নি। ৫২’ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারন করতে গিয়ে তিনি বলেন, মায়ের ভাষা বাংলাকে কেড়ে নিয়ে পাকিস্থানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুই আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে এটা আমরা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারিনি। ১৯৪৮ সালের জিন্নাহ ঘোষনা দেয়ার পর থেকেই আমরা প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলি। আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠন করতে থাকি। সংস্কৃতির শহর মানিকগঞ্জ ছিলো রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে উত্তাল।
কর্মময় জীবনে আব্দুল হাকিম মাস্টার ১৯৬৫ সালে তেরশ্রী কে.এন.ইনষ্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার ছিল সক্রিয় ও বলিষ্ট ভুমিকা। ৫২’র ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং ৯০ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থেকে সক্রিয় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তিনি উপজেলা কমিউনিষ্ট কমিউনিষ্ট পার্টির সভাপতির দায়িত্ব এবং পরে তিনি জেলা কমিউনিষ্ট পার্টির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সফরকালে পাকিস্থানের স্থপতি ও গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষনা দেন বাংলার পরিবর্তে উর্দুই হবে পূর্ব বাংলার রাষ্ট্র ভাষা। এই ঘোষনার প্রতিবাদে সমগ্র বাঙ্গালী জাতি ক্ষোভে বিক্ষোভে ফেটে পরেন। মহানগর থেকে শুরু করে জেলা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন। মানিকগঞ্জের মানুষও আন্দোলন গড়ে তুলেন। দলে দলে ছাত্ররা নেমে পড়ে রাজপথে। সঙ্গে যুক্ত হয় নানা পেশার মানুষ। সেই সময় ১৯৪৯ সালে আঃ হাকিম মাস্টার তেরশ্রী কে. এন ইনষ্টিটিউশনের ১০ম ছাএ থাকাকালীন যুক্ত হয়ে পরেন ৫২’র ভাষা আন্দোলনে। ভাষা সৈনিক কমরেড আব্দুল হাকিম মাস্টার ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তেরশ্রী কে. এন ইনষ্টিটিউশনের সহকারী শিক্ষক কমরেড প্রমোথ নাথ নন্দী এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তার সাথে যুক্ত হয় একই বিদ্যালয়ের প্রয়াত ক্রিয়া শিক্ষক আফছার উদ্দিন, মিরান উদ্দিন ও যতিন দাশ। এদের দু’ জনের প্রেরনায় আন্দোলন বেগবান হতে থাকে। ভাষা আন্দোলন সংগ্রাম পরিষদ’ এর ব্যানারে মানিকগঞ্জে ধীরে ধীরে যুক্ত হতে থাকে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন। তৎসময়ে মানিকগঞ্জ জেলা কেন্দ্রীক ভাষা আন্দোলনের ব্যানারে যারা অংশ গ্রহন করেন তারা হলেন সহকারি শিক্ষক প্রমোথ নাথ নন্দি, ক্রীড়া শিক্ষক প্রয়াত আফছার উদ্দিন, কলেজ শিক্ষার্থী প্রমোথ সরকার, ডাঃ মোবারক আলী, ডাঃ আঃ ছালাম, আব্দুল হাকিম মাস্টার, মিরান উদ্দিন, আঃ রহমান ঠাকুর (ছাত্র), ভ’পেন দাশ ছাত্র (ছাত্র), ফনিন্দ্র নাথ সরকার (ছাত্র), মোঃ রেহাজ উদ্দিন (ছাত্র)। এ ছাড়া মানিকগঞ্জ সদরে যারা আন্দোলনে অংশ গ্রহন করেন তারা হলেন ডাঃ শামসুর রহমান, আনোয়ার আলী চৌধুরী, ওয়াবেশ উদ্দিন পাশা, জাফর আলী চোধুরী, প্রয়াত খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, বাহাদুর আলী প্রমুখ। উল্লেখিত আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকার হুলিয়াজারী করেন। সকল আন্দোলনকারী ছাত্ররা গ্রেফতার এরিয়ে গোপনে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার চেষ্ঠা করেন। তবে দুঃখ জনক হলেও সত্য উল্লেখিত ভাষা সৈনিকদের সংগ্রামী কার্যকলাপের ওপর মানিকগঞ্জ জেলায় পৃথক কোন স্মৃতি নেই। এমনকি সবার ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি।
ভাষা সৈনিক কমরেড আব্দুল হাকিম মাস্টারের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, আমাদের মুল স্লোগান ছিল রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই। মিছিল আর স্লোগান দিয়ে ভাষার জন্য আমরা সংগ্রাম করেছি। মানিকগঞ্জ শহরে এবং ঘিওরে পৃথক- পৃথক মিছিল, সমাবেশ করার সময় পুলিশ আমাদের টার্গেট করে। এক পর্যায়ে পুলিশ ওয়াজেদ উদ্দিন,রেহাজ উদ্দিন, নিরঞ্জন ও যতিনকে গ্রেফতার করে মানিকগঞ্জ কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বহু জুলুম, অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে দিনের পর দিন পালিয়ে থেকেছি। বিনা কারনে রাষ্টদ্রোহী মামলা দিয়ে আমাদের আটক করা হয়। জেল কাটাতে হয়েছে দিনের পর দিন। পরবর্তীতে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। মায়ের ভাষার জন্য এ দেশের ছাত্ররা ঢাকা রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। এত কিছুর পরেও বাংলা ভাষার প্রতি চলছে চরম অবজ্ঞা। সব বিতর্কের উর্দ্ধে উঠে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাস্তবায়ন করা হোক। বয়সের ভারে নুয়ে পরা আবেগাপ্লুত কন্ঠে কমরেড আব্দুল হাকিম মাস্টার আরো বলেন, যে ভাষার জন্য আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৭১’ এর মুক্তিযুদ্ধে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু ৪৮ বছর অতিবাহিত হবার পরেও ভাষা সৈনিকদের রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি । তিনি আর বলেন, ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হওয়ার পর থেকে গর্ভে বুকটা ভরে গেছে। আবার দুঃখ হয়, আনন্দটাম্লান হয়ে যায়। যখন দেখি আমাদের দেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার এখনও যথার্থ প্রয়োগ নেই। সব বিতর্কের উঠে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল আজিজ জানান, ভাষা সৈনিক কমরেড আঃ হাকিম মাস্টার একজন ভাষা সৈনিক এবং দেশ প্রেমিক। তাকে শ্রদ্ধা এবং সম্মান করা আমাদের জাতির কর্তব্য। মানিকগঞ্জে জারা ৫২’ ভাষা আন্দোলনে অংশ গ্রহন করেছে তাদের সবাইকে শ্রদ্ধা জানাই। বাংলা ভাষার জন্য তাদের সংগ্রাম আন্দোলনের কথা সারা দেশের মানুষ মনে রাখবে। তবে সকল ভাষা সৈনিকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন।

কালের কাগজ/প্রতিনিধি/জা.উ.ভি


এ জাতীয় আরো খবর
Tech Support By Nagorikit.Com