মুক্তার হাসান,টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:২৪ আগস্ট-২০২২,বুধবার।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে গৃহবধূ রূপার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেতে পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা দুই লাখ টাকা দাবি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই গৃহবধূর বাবা মো. ছানোয়ার হোসেন। বুধবার(২৪ আগস্ট) সকালে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ওই অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মো. ছানোয়ার হোসেন জানান, প্রায় আট বছর আগে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ি ইউনিয়নের তেজপুর গ্রামের মোজাম্মেল তালুকদারের ছেলে মিঠু তালুকদারের সাথে তার মেয়ে রূপা আক্তারের বিয়ে হয়। তিনি বিয়ের পর মিঠুকে বিদেশে যাওয়ার জন্য দুই লাখ টাকা দেন। একবছর পর মিঠু দেশে ফিরে রূপা আক্তারকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে চাপ দেয়। এনে না দেওয়ায় রূপা আক্তারের উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাতে থাকে। এ কারণে রূপা আক্তার তার স্বামী মিঠু তালুকদারকে তালাক দিয়ে বাড়িতে চলে যায়। বিয়ে বিচ্ছেদের পর প্রায় ছয় মাস পর মিঠু তালুকদার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় রূপাকে পুনরায় বিয়ে করে। এর কিছুদিন পর রূপা আক্তারের স্বামী মিঠু তালুকদার আবার স্বমূর্তি ধারণ করে। তিনি জানান, নানাভাবে অত্যাচার-নির্যাতনের এক পর্যায়ে রূপা স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় মিঠু তালুকদার রাস্তা থেকে জোর করে রূপাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়ি নেওয়ার পর রূপার উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়লে তাকে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। চলতি বছরের ১৮ মার্চ সকালে লোকমুখে খবর পেয়ে তিনি মিঠু তালুকদারের বাড়িতে গেলে তাকে জানানো হয়- রূপা ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করেন, অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে রূপা আক্তারকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে মেয়ের লাশ দেখতে দেওয়া হয়নি, পুলিশ লাশ মর্গে নেওয়ার সময় তিনি রূপা আক্তারের কব্জির রগ কাটা অবস্থায় দেখতে পান। লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কালিহাতী থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) আল আমিন তাকে রূপা আক্তারের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পক্ষে আনতে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। এতো বেশি টাকা দিতে অস্বীকার করায় এসআই আল আমিন তাকে ধমক দিয়ে বলেন- আসামি পক্ষ তাকে তিন লাখ দিয়েছে, দুই লাখ টাকা দিলে তিনি পক্ষে রিপোর্ট এনে দিবেন। তিনি থানার ওসির সাথে কথা বলতে চাইলে এসআই আল আমিন কথা বলতে দেয় নাই এবং থানায় অভিযোগ দায়ের করতেও দেয়নি। সংবাদ সম্মেলনে গৃহবধূর বাবা মো. ছানোয়ার হোসেনের সাথে নিহত রূপার মা ও প্রতিবেশিরা উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আল আমিন জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আনতে তিনি কোন টাকা দাবি করেন নি। গৃহবধূ রূপা আক্তারের বাবা সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোল্লা আজিজুর রহমান জানান, গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে এবং যথাযথ কার্যাদি সম্পন্ন করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।