কামাল হোসেন, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :০ে৪ ফেরুয়ারী-২০২০,মঙ্গলবার।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় অতি দরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজে শ্রমিকের পরির্বতে এস্কোভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কাটার কাজ করানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে এ প্রকল্পে নির্ধারিত শ্রমিকরা কাজ করতে না পেরে পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছে অনাহারে অর্ধাহারে। অপরদিকে প্রকল্পের সভাপতি শ্রমিকের পরির্বতে ৪০ দিনের জায়গায় ৫/৭ দিনেই এস্কোভেটার মেশিন দিয়ে মাটি কাটার কাজ করিয়ে প্রকল্পের বেশির ভাগ টাকাই হাতিয়ে নিয়েছেন এমন অভিযোগ স্থানীয় শ্রমিক ও এলাকাবাসীর। এ বিষয়ে উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের মন্দিয়াতা গ্রামের মৃত কটু মিয়ার ছেলে মো. শাহ আলম বিগত ২০ জানুয়ারী সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর ও ২৬ জানুয়ারী তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির বিরোদ্ধে অতিদরিদ্র কর্মংসংস্থান কর্মসূচির প্রকল্পের কাজে শ্রমিকের পরিবর্তে এস্কোভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কাটার অভিযোগ এনে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের অতি দরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর প্রকল্পে আওতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে চলতি অর্থ বছরে উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের মন্দিয়াতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সন্নাসী আপর বাধঁ পর্যন্ত প্রকল্পের জন্য পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য ও প্রকল্প বাস্তাবায়ন কমিটির সভাপতি মো. সাজিনুর মিয়াকে মোট ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
কিন্তু প্রকল্প বাস্তাবায়ন কামিটির সভাপতি সাজিনুর মিয়া প্রকল্প নীতিমালা লঙ্গণ করে অতি দরিদ্রদের কর্মসূচির ৪০ দিনের শ্রমিকের শ্রমিকদের মাধ্যমে কাজ না করিয়ে তড়িগড়ি করে এস্কোভেটর যন্ত্র দিয়ে সড়ক ও আপর বাধেঁর কাজ শেষ করেন। শুধু তাই নয়! প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত শ্রমিক দিয়ে সড়ক ও আফর বাঁধে ৩শ মিটার দূর থেকে মাটি কাটার নির্দেশনা থাকলেও প্রকল্পের সভাপতি ও ওয়ার্ড সদস্য সাজিনুর মিয়া সরকারের নিয়মনীতি ও নির্দেশনাকে তোয়াক্ষা না করে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে এস্কোভেটর যন্ত্র দিয়ে সড়ক ও বাঁধের ৮ থেকে ১০ ফুট দূর থেকে নদীর পাড় কেটে বাধেঁ মাটি দেন। এত করে পাহাড়ী ঢলে নদীর পাড় ভাঙ্গনসহ সড়ক ও আপর বাধঁ ভেঙ্গে হাওর ডুবে কৃষকের ফসল হানি সম্ভাবনাও রয়েছে। অভিযোগে আরও উল্লেখ্য করেছেন, মন্দিয়াতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সামনের স্থান থেকে এস্কোভেটর দিয়ে বিশাল গর্তকরে মাটি কাটার ফলে বর্ষা মৌসুমে ওই গর্তে পরে স্কুলে আগত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রাণ হানির হুমকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় অভিবাবক ও স্কুল শিক্ষক গন।
অভিযোগকারী শাহ আলম বলেন, একই স্থানে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৩ লাখ ৮০ হাজার, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ৮ মে.টন চাউল (কাবিকা) ব্যায় দেখিয়ে স্থানীয় শ্রমিকদের পরিবর্তে সাতক্ষীরা থেকে শ্রমিক এনে নাম মাত্র কাজ করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেন প্রকল্প বাস্তাবায়ন কমিটির সভাপতি সাজিনুর মিয়া। শুধু তাই না। ওই ওর্য়াড সদস্য সাজিনুর মিয়ার বিরোদ্ধে বিগত বন্যার সময় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ভিজিএফ বরাদ্ধেও আতœীয় করনসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় মন্দিয়া গ্রামের অতিদরিদ্র শ্রমিক মোর্শেদা বেগম ও মনু মিয়া ক্ষোভ নিয়ে বলেন, সরকার তাদের ৪০ দিনের কর্মসূচী দিয়েছেন তারা যেনো কাজ করে খেতে পারেন। তারা বলেন, প্রতিদিন এ প্রকল্পে ২শ টাকা রোজে এখানে ৪০জন মিলে মাটি কাটার নিয়ম থাকলেও ওয়ার্ড সদস্য সাজিনুর মিয়া এস্কোভেটর যন্ত্র দিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করেছেন।
স্থানীয় মন্দিয়াতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সানজু মিয়া বলেন, প্রকল্প বাস্তাবায়ন কমিটির সভাপতি সাজিনুর মিয়া বিদ্যালয়ের জায়গার ভবনের কাছ থেকে বিশাল গর্ত করে এস্কোভেটর দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে বাধঁ দিয়েছেন। ফলে বিদ্যালয়ের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা যে কোন সময়ে দূঘটনার কবলে পরার আশংকা রয়েছে।
অভিযুক্ত ইউপি ওয়ার্ড সদস্য, প্রকল্প বাস্তাবায়ন কমিটির সভাপতি মো. সাজিনুর মিয়া প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে তিনি বলেন, কিছু কাজ এস্কোভেটার দিয়ে করিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। এবং কিছু কাজ তিনি শ্রমিক দিয়ে করিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি বলেন, অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর ৪০ দিনে কাজ শ্রমিক দিয়েই করানো। কিন্তু কেউ যদি এস্কোভেটর যন্ত্র দিয়ে অতিদরিদ্র প্রকল্পের কাজ করেন তাহলে তা সরকাওে নীতিমালা বহির্ভূত কাজ। যদি এ প্রকল্পের কাজ শ্রমিকদের পরিবর্তে এস্কোভেটর দিয়ে করে থাকেন তাহলে তদন্তপূর্বক তার বিরোদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
কামাল হোসেন