কালের কাগজ ডেস্ক: ৩১ জানুয়ারী-২০২০,শুক্রবার।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছে। আগামীকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে ভোটগ্রহণ। ভোটগ্রহণে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। প্রার্থী আর ভোটারসহ সবাই এখন ভোটের সময় শুরুর অপেক্ষায়।
সার্বিক নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় পুরো রাজধানীজুড়ে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে বদ্ধপরিকর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় থাকছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪০ হাজারের বেশি সদস্য। এর মধ্যে বিজিবি, র্যাব থাকবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বরাবরের মতো এবারও থাকছে আনসার ও ভিডিপি।
ঢাকা নগরীতে নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করবে ৬৫ প্লাটুন বিজিবি, এর পাশাপাশি ১০ প্লাটুন থাকবে ‘রিজার্ভ ফোর্স’ হিসেবে। গতকাল সরেজমিন নগর ঘুরে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই রাজধানীতে টহল দিতে শুরু করেছে তারা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’র (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নিরাপত্তার স্বার্থে দুই সিটি করপোরেশনে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ৬৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির সদস্যরা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচন শেষ হওয়ার পরের দিন অর্থাৎ তারা ভোটের আগে ও পরে মোট চারদিন দায়িত্ব পালন করবে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব এর মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন। নিরাপদে ভোট অনুষ্ঠানের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, কেউ নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করলে তাদের প্রতিহত করা হবে। নির্বাচনী ক্যাম্পের আশপাশে কোনো অবাঞ্ছিত লোককে থাকতে দেওয়া হবে না।
ভোটের প্রচারে রাজধানীতে আসা ব্যক্তিদের শহর ছাড়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি নগরীতে বসবাসকারীদের প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বেনজীর আহমেদ। ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে নিজের অভিমত তুলে ধরে কোনো ছিনতাইকারী বা ম্যানহোলের ঢাকনা চোর যাতে কাউন্সিলর না হতে পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান র্যাব প্রধান।
হেলিকপ্টার, ডগ-স্কোয়াড ও বোম ডিসপোজাল ইউনিট প্রস্তুত আছে জানিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে র?্যাবের বাড়তি নজরদারি রয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন জানিয়েছেন, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে আরও আগ থেকেই গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
দুই সিটির নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে গোয়েন্দারা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। কে কোন রাজনৈতিক দলের তা তাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এখন থেকেই সন্দেহজনক ব্যক্তিদের তল্লাশির আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা পাশাপাশি জামিন আসা সন্ত্রাসীদেরও নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিময় পরিবেশে পুরো ভোট প্রক্রিয়া শেষ করতে আন্তরিকতার সহিত কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীর। তিনি জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং দুটি ওয়ার্ডের জন্য একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক থাকছেন।
ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতেও তল্লাশি বৃদ্ধি করা হয়েছে। তা ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া আছে সোশ্যাল মিডিয়া উসকানিমূলক প্রচারণা মনিটরিং করার ক্ষেত্রে। এক কথায় নির্বাচনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য এবং ভোটারসহ সবার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কয়েকটি স্তরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানা যায়, সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত থাকবে। ইভিএমের কারিগরি সহায়তায় প্রতি ভোটকেন্দ্রে দুজন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ভোটারদের নিরাপদে, নির্বিঘ্নে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে।
ঢাকা উত্তরে ১ হাজার ৩১৮টি ভোটকেন্দ্রের ৭ হাজার ৮৫০ টি বুথে ৩০ লাখ ৯ হাজার এবং দক্ষিণ সিটিতে ১ হাজার ১৫০ ভোটকেন্দ্রের ৬ হাজার ৫৮৯টি বুথে ২৪ লাখ ৫২ হাজার ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।