কালের কাগজ ডেস্ক:২১ ডিসেম্বর,শুক্রবার ।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জনগণকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না দিলে দেশে মহাসঙ্কটের সৃষ্টি হবে। এখনও সামনে সাত দিন সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার হয়রানি বন্ধ করে, প্রচারণার সমান সুযোগ দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন। তা না করে ভাঁওতাবাজির নির্বাচন করলে তা কেউ মেনে নেবে না।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পুরনো পল্টনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আদালত কর্তৃক ঘোষিত ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী শূন্য আসনগুলোতে পুনঃতফসিল ঘোষণারও দাবি জানানো হয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে।
এছাড়াও রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষনেতা ড. কামাল। একইসঙ্গে ঢাকা মহানগরীতে ঢাকা-৪ থেকে ঢাকা-১৮ আসনে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রচারণা ও নির্বাচনী মিছিল-সমাবেশ অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকার প্রতিটি আসনে একই সময়ে জনসভা ও গণমিছিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, জনগণকে ভোট দিতে না দেওয়াটা হবে দেশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। এই আঘাত কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আর তখন সংবিধান লঙ্ঘনের মতো চরম অপরাধের জন্য দায়ী হবে এ সরকার। বর্তমান সরকার তাদের কার্যকলাপে অতীতের সকল স্বৈরাচারকে ছাড়িয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানির তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বিগত ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, এভাবে পরিকল্পিতভাবে পুলিশকে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া, পুলিশ ও সরকারি দল মিলে যারা ভোট চাইতে যাচ্ছে, তাদের ওপর আক্রমণ করার মতো ঘটনা আর কখনো হয়নি। এমন আর কখনো দেখিনি। কল্পনাও করা যায় না যেভাবে নির্বাচনী পরিবেশকে ধ্বংস করা হয়েছে। এটা যেন অবিলম্বে বন্ধ করা হয়। না হলে সংবিধান লঙ্ঘন করার জঘন্য অপরাধ হবে। সংবিধানকে ভঙ্গ করার অপরাধ হবে।
ড. কামাল হোসেন বলেন, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুযোগ না দেওয়া হলে যারা নির্বাচিত দাবি করবে- তাদের কোনোভাবেই নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যাবে না। তখন মহাসঙ্কট সৃষ্টি হবে। জনগণ দেশের ক্ষমতার মালিক। তাদের ভোট দিতে না দেওয়া স্বাধীনতার ওপর আঘাত। এই আঘাত কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।
ঐক্যফ্রন্ট নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার ও হামলা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি জানান, গতকালও যশোর-২ আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী আবু সাঈদ মো. শাহাদাত হুসাইনকে তার ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ফ্রন্টের ১৬ জন প্রার্থীকে গ্রেফতার করে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশে ১৩টি আসনে প্রার্থী শূন্য করা হয়েছে। এসব আসনে পুনঃতফসিল ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে ঐক্যফ্রন্ট থেকে।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, মাথা ঠিক করেন। মাথা ঠাণ্ডা করেন। মাথা সুস্থ করেন। ইলেকশনে জিততে হবে। এভাবে ভাঁওতাবাজি করে জিতবেন, এটাকে জিতা বলে না। মানুষের সঙ্গে ভাঁওতাবাজি করা, মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা সংবিধান লঙ্ঘন। যেটা করা হচ্ছে, যত স্বৈরাচারী সরকার এ পর্যন্ত এসেছে- সবাইকে তারা ছাড়িয়ে গেছে। তাই আপনাদেরকে ভালোভাবে বলছি, সাত দিন সময় আছে। এসব বন্ধ করুন। বন্ধ না হলে জনগণ এ নির্বাচন মেনে নেবে না এবং কারও কাছেই তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে কলারোয়া ও ইটনা থানার ওসিসহ নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন বলেন, সরকার সারা দেশে ঐক্যফ্রন্ট নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে নামিয়ে দিয়েছে। এটা তাদের পরিকল্পিত কর্মকাণ্ড। দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান অন্তরায় এখন পুলিশ ও সরকারি দল। দেশের স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর আজ এ ঘটনা দেখতে হচ্ছে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। আমি আশা করব এই সংবাদ সম্মেলনের পর থেকেই সরকার এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করবে। অন্যথায় এক মহাসংকটে পড়বে দেশ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, দলটির কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, গণফোরাম নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
কালের কাগজ/প্রতিবেদক/জা.উ.ভি