কামরুল হাসান জুয়েল ফরিদপুর থেকে: ৩০ জানুয়ারি-২০২০,বৃহস্পতিবার।
ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে হরিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪৪ এসএসসি পরীক্ষার্থী এখনো তাদের প্রবেশপত্র পায়নি। ফলে দিন ঘনিয়ে আসলেও পরীক্ষায় অংশগ্রণের অনিশ্চয়তা কাটছে না তাদের। প্রবেশ পত্রের আশায় প্রতিদিনই স্কুলে এসে ঘুরে যাচ্ছে তারা। এ নিয়ে তারা ওই স্কুলের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনেছে। এসব পরীক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো: লুৎফর রহমান ও আইসিটি শিক্ষক মো: সোহেল রানা তাদের পরীক্ষার ফরম পুরণের জন্য বিজ্ঞান বিভাগে নির্ধারিত ফি ১৯ শ’ ৫০ টাকা ও অন্যান্য বিভাগে নির্ধারিত ফি ১৮ শ’ ৫০ টাকা করে নেন। কিন্তু তাদের কোন রশিদ দেননি। জমা রশিদ চাইলে পরে দিবেন বলে জানান। ওই পরীক্ষার্থীরা অবশ্য পরে জানতে পারেন যে, তাদের ফরম পুরণের টাকা সময়মতো ব্যাংকে জমা না দেয়ায় বোর্ড থেকে তাদের প্রবেশ পত্র সরবরাহ করা হয়নি। জানা যায়, ওই বিদ্যালয় থেকে এবার বিজ্ঞান বিভাগে ৪ জন, বাণিজ্য বিভাগে ৪ জন ও মানবিক বিভাগে ৩৬ জন মোট ৪৪ জন পরীক্ষার্থী এভাবে ফরম পুরণের টাকা জমা দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬ জন রয়েছে যারা জেএসসি পরীক্ষাতেও পাশ করেনি। কিন্তু আইসিটি শিক্ষক তাদের খাতা চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে পাশ করিয়ে এনেছেন বলে তাদের জানানো হয়েছে। যদিও অনলাইনে রোল নম্বর দিয়ে পরীক্ষা করেও তারা ফেল করেছে বলেই জানতে পেরেছে। এসব শিক্ষার্থীদের নিকট থেকেও ফরম পুরণের জন্য টাকা নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আইসিটি শিক্ষকের বদান্যতায় তারা নবম শ্রেণিতে রেজিট্রেশন করেছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক। তবে ওই শিক্ষার্থীদের কাগজ পত্র দেখতে চাইলে সাংবাদিকদের দেখাতে পারেননি তিনি। এসব ব্যাপারে প্রতিবাদ করতে গেলে পরীক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষায় ফেল করার হুমকি দেয়া হয় বলে তারা জানান। জানা গেছে, গতকাল বুধবার মানবিক বিভাগের হাসান নামের এক পরীক্ষার্থীর মোবাইলে ইমো নম্বারে আইসিটি শিক্ষক সোহেল রানা বিজ্ঞান বিভাগের একটি প্রবেশ পত্র দেন। পরে আবার মানবিক বিভাগের প্রবেশ পত্র প্রেরণ করেন। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আইসিটি শিক্ষক সোহেল রানা এসব কারণের জন্য দায়ি বলে মন্তব্য করেন। তিনি দাবি করেন, অনেক আগেই সোহেল রানার কাছে টাকা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই টাকা সে জমা না করে একটি ভুয়া জমা রশিদ এনে দেয় তাকে। সেই রশিদ এখনো তার কাছে সংরক্ষিত আছে বলে জানান তিনি। প্রধান শিক্ষক তার গাফিলতির কথা স্বীকার করে বলেন, বোর্ডে গিয়ে টাকা জমা না হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তিনি নতুন করে টাকা জমা দিয়ে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশ পত্র আনার চেষ্টা করছেন। সোহেলের উপর নির্ভর করা তার ভুল হয়েছে বলে তার দাবি। এ ব্যাপারে সোহেল রানা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সব কিছুই ঠিক আছে। তার কোন গাফিলতি নেই। ১ ফেব্রুয়ারী শনিবার বিদ্যালয়ে আসলে তিনি সকল প্রমাণ দেখাতে পারবেন। এ ব্যাপারে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানা বলেন, পরীক্ষার্থীদের নিকট হতে অভিযোগ পেয়ে প্রবেশ পত্র আনার ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে তদন্তপূর্বক দায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রসঙ্গত, ৩ ফেব্রুয়ারী থেকে শুরু হচ্ছে এবারের এইচএসসি পরীক্ষা। গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে এ পরীক্ষার ফরম পুরণ শুরু হয়। বিলম্ব ফি ছাড়া ১৭ নভেম্বর ও বিলম্ব ফি সহ ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত ফরম পুরণের সময় ছিলো।