Logo
নোটিসঃ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : আলহাজ্ব এ.এম নাঈমূর রহমান দূর্জয় ,সম্পাদক ও প্রকাশক মো: জালাল উদ্দিন ভিকু,সহ-মফস্বল সম্পাদক মো: জাহিদ হাসান হৃদয়

বই বিক্রি না করলে খাবো কি

রিপোর্টার / ২৪ বার
আপডেট রবিবার, ৮ মার্চ, ২০২০

আবুল হোসেন গোয়ালন্দ(রাজবাড়ী )প্রতিনিধি :০৮ মার্চ-২০২০,রবিবার।

যে বয়সে নতুন বই হাতে নিয়ে প্রাইমারি স্কুলে যাওয়ার কথা। সমবয়সীদের সাথে খেলায় মুগ্ধ থাকার কথা। পড়া-লেখার জন্য বাবা-মায়ের বকুনী খাওয়ার কথা। সেই বয়সে বই হাতে নিয়ে বিক্রি করছে বশির (১২) ও রিপন (৯)। কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে বই বিক্রি করতে এসেছে ওরা। সারাদিন বই বিক্রি করে সংসারে ভাই-বোনের মুখে খাবার তুলে দেওয়ায় ওদের লক্ষ ও উদ্দ্যেশ্য। শিশু বয়সে পরিবারে অভিবাবকের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে দারিদ্রতার কারণে।
সকাল ৯টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন এলাকায় বই বিক্রি করে তারা। যেমন লঞ্চ, ফেরি, বাস ও কখনও ট্রেনে গিয়ে বই বিক্রি করে। কোথায় থেকে উঠে আর কোথায় গিয়ে নামে এর নিদিষ্ট কোন স্থান নেই। উদ্দ্যেশ বই বিক্রি। বই বিক্রি করতে গিয়ে জেলার পাংশা, কালুখালী, সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায় ঘুরে বেড়ান সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। বই বিক্রি করতে গিয়ে কখনও জেলার বাইরে পাটুরিয়া, মাঝপাড়া, কুষ্টিয়া সহ বিভিন্ন এলাকায়। যত রাত হোক মহাজনের কাছে গিয়ে হিসেব দিয়ে বাজার করে ঘরে ফেরা। আবার সকালে বই বিক্রির উদ্দ্যেশে বের হওয়া। চাওয়া-পাওয়ার সব কিছু বিসর্জন দিয়ে এমনি ভাবে দিন কাঁটে, সপ্তাহ কাঁটে, মাস ও বছরও কাঁটে ওদের।
কারো প্রতি কোন অভিযোগ নেই। বই বিক্রি করে টাকা উপার্জন হলে ভাই বোনের মুখে হাসি ফুঁটবে এই ভাবনায় দিন কাঁটে। যেন পরিবারের সকলের মুখে হাসি ফুঁটানোর জন্য জম্ম হয়েছে ওদের।
শনিবার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরিতে কথা হয় বশির (১২) ও রিপন (৯) এর সাথে। বশির রাজবাড়ী জেলা দৌলতদিয়া শাহাৎ মেম্বার পাড়ার মোতালেব মোল্লার ছেলে। রিপন একই এলাকার সামসুল শেখের ছেলে। বশির সংসারে অভাবের কারণে গত ৩বছর যাবৎ লঞ্চ, ফেরি ও ট্রেনে গিয়ে বই বিক্রি করে। রিপনও সংসারে অভাবের কারণে গত দেড় বছর যাবৎ বই বিক্রি করে। রিপন আরো বলেন যে, এক সময় আমাদের আর্থীক অবস্থা খুবই ভালো ছিলো । আমি দেখেছি যে আমাদের বাড়ীতে অন্য লোক জন এসে কাজ করে খেত আর আমিই এখন মানুষের দ্বারে বই বিক্রয় করে সংসার চালাতে হয়। এ অবস্থা হয়েছে সর্বনাশা পদ্মা নদীর কারনে নদী ভাঙনে আমাদের সহায় সম্বল সব কিছু নদী গর্ভে চলে গেছে।
বশির জানায়, ক্লাস তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি। কিন্ত না খেয়ে আর কতদিন স্কুলে যাবো। তাই বই বিক্রি করি। এখন আর না খেয়ে থাকতে হয় না। কষ্ট হলেও এখন আমার কাছে টাকা থাকে। তবে আমার বয়সের যারা স্কুলে যায় দেখলে মন খারাপ লাগে। ইচ্ছা হয় স্কুলে যাই।
রিপন জানায়, আমার বই বিক্রি করতে ভালো লাগে না। আমি কখনও স্কুলে যায়নি। স্কুলে যেতে মন চায়। আমার বয়সের সবাই স্কুলে যায়। সংসারে অভাব। বাবা কোন ভারী কাজ করতে পারে না। তাই এই বয়সে টাকা আয় করার জন্য বই বিক্রি করতে হচ্ছে। বই বিক্রি না করলে খাবো কি? তাই আমি বই বিক্রি করি।


এ জাতীয় আরো খবর
Theme Created By ThemesDealer.Com