মুক্তার হাসান,টাঙ্গািইল প্রতিনিধি:১৪ আগস্ট-২০২২,রবিবার।
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় ১১ মাস কারাবাস করেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার সাফলকুড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা খোদা বক্স। তিনি জানান, আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়নরত। ১৯৭৫ সনের ১৪ই আগস্ট বিকেল থেকেই সেনাবাহিনীর গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘুরতে দেখে আমার যেন কেমন সন্দেহের সৃষ্টি হয়। কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে কি না? আমি মহসীন হলে থাকি। শেষ রাতের দিকে গোলাগুলির শব্দ শুনে মনের মধ্যে শঙ্কা জেগে ওঠে। ১৫ই আগস্ট সকালে শুনতে পেলাম বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের একদল বিপদগামী সেনা সদস্যরা হত্যা করেছে। পাশেই আমার বন্ধু সমাজকল্যাণ বিভাগে অধ্যায়নরত সামছুল হকের সমাজকল্যাণ ইন্সটিটিউটে যাই। তাঁর সাথে পরামর্শ করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করতে গিয়ে ব্যর্থ হই। অবশেষে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর সাথে দেখা করি। বঙ্গবীর বললেন, তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর সাথে কথা বলে জানাবেন। আমি দুই তিন দিন আত্মগোপনে থেকে ভূঞাপুরে চলে আসি। সংবাদ পেলাম বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী কালিহাতী উপজেলার জোকারচর গ্রামে দেখা করতে বলেছেন। তাঁর সাথে দেখা হওয়ার পর তিনি দু’টি অস্ত্র আমার হাতে দিয়ে জানালেন তোমরা সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রস্তুতি নাও। পরবর্তীতে আবার ভূঞাপুর উপজেলার নলিন বাজারে বঙ্গবীরের সাথে দেখা করি। তিনি গাফ্ফার চৌধুরির লেখা কয়েকটি পত্রিকা ও কিছু চিঠি তুলে দিলেন আমার হাতে। নির্দেশনা দিলেন এগুলো যেন ঢাকা ও সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে চিঠিগুলো পৌছে দেয়ার জন্য। তিনি জানালেন নলিনের আব্দুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনের কাছে অস্ত্র পৌঁছে দিয়েছেন। আমি তাঁর নির্দেশনা মোতাবেক চিঠি ও পেপারগুলো বিভিন্ন জনের কাছে পৌঁছে দেই। পরবর্তীতে ঢাকায় গিয়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করি। এরমধ্যে জয়নাল হাজারী, চট্টগ্রামের মতিন, টাঙ্গাইলের এনায়েত করিম, ভূঞাপুরের সৈয়দ জিয়া, আলীম তালুকদার, কালিহাতীর আশরাফ গিরানী ও কাজী আশরাফ হুমায়ুন বাঙ্গাল, আসাদুজ্জামান আরজু, আনোয়ার পাহাড়ীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে দেখা করে জানালাম, বঙ্গবীর প্রতিরোধ গড়ে তুলে প্রতিশোধ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন এবং সকলকে সংগঠিত হওয়ার জন্য আহŸান জানিয়েছেন। ইতোমধ্যেই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ ও প্রতিশোধ নেওয়ার সংবাদ বিপদগামী সেনাবাহিনীর কাছে পৌঁছে যায়। পরবর্তীতে ১৭ই নভেম্বর আমাকে আমার বাড়ি থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে প্রথমে টাঙ্গাইল এবং পরে ঢাকায় নিয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। অবশেষে ১৯৭৬ সনের ১লা অক্টোবর আমি কোন রাজনীতি দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকবো না এই মুচলেকায় আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আমি ১৯৭৮ সনের বাংলাদেশ ডিফেন্স ফাইন্যান্সে চাকরি নেই। সেখানেও আমাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আমার ছোট ভাই প্রয়াত ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম এডভোকেটকেও সেনা সদস্যরা ধরে নিয়ে তিনদিন আটকে রেখেছিল। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সনের ১৪ আগস্ট আমাদের ঘর-বাড়ি পাকবাহিনীর সদস্যরা পুঁড়িয়ে দিয়েছিল।
তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতো। তার ছোট ছেলে শেখ মনিররের সাথে আমার সু-সম্পর্ক ছিল। তাঁর বাসায় আমার যাতায়াত ছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমার বাবার পরেই বঙ্গবন্ধুর স্থান। এখন আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করি।