রঙপুর বেরোবি প্রতিনিধি:০৪ আগস্ট-২০১৯,রবিবার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষককে নিয়ে ফেসবুকে অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্য করায় তিন কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ২৫ জুলাই ২০১৯ তারিখে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হলে সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় ১লা আগস্ট ২০১৯ তারিখ বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বরখাস্ত হওয়া তিন কর্মচারী হলেন কেন্দ্রিয় ক্যাফেটেরিয়ায় কর্মরত সিনিয়র পিএ কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ রবিউল ইসলাম, নিরাপত্তা প্রহরী মোঃ নুর আলম মিয়া এবং রসায়ন বিভাগের ল্যাব এ্যাটেনডেন্ট মালেক মিয়া।
অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক এবং গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমান কে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্য করেন এই তিন কর্মচারী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁকে হেয় করে নানা মন্তব্য করায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার পাশাপাশি নগরীর তাজহাট থানায় গত ২৭ জুলাই ২০১৯ তারিখে সাধারণ ডায়েরিও করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে এ বিষয়ে তদন্ত চলছে তবে বিষয়টি আমলযোগ্য হওয়ায় এটিকে এজাহার হিসেবেও গ্রহণ করা হতে পারে।
জানা যায়, গত ১৪ মে ২০১৯ তারিখে অনুষ্ঠিত অর্থ কমিটির ২৫তম সভার সুপারিশ এবং ১৫ মে ২০১৯ তারিখে অনুষ্ঠিত পরিচালক প্রফেসর ড. আর এম হাফিজুর রহমানকে আহ্বায়ক এবং রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তাফা কামালকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হাবিবুর রহমান, ইউজিসির অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক রেজাউল করিম হাওলাদার, ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের অর্থ ও হিসাব বিভােেগর পরিচালক ইলিয়াস হোসেন এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোঃ এমদাদুল হক। উক্ত কমিটি পরপর তিনটি সভা করে নীতিমালা ১১ জুলাই ২০১৯ তারিখে অনুষ্ঠিত অর্থ কমিটির ২৬তম সভায় উপস্থাপন করলে তা সভার সুপারিশক্রমে সিন্ডিকেটের ৬২তম সভায় অনুমোদিত হয়।
উক্ত নীতিমালাকে কেন্দ্র করে বরখাস্ত হওয়া তিন কর্মচারী কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র শিক্ষক প্রফেসর ড. আর এম হাফিজুর রহমান সেলিমের উদ্দেশ্যে নানা বাজে মন্তব্য করে। ক্যাফেটেরিয়ার কর্মচারী মোঃ রবিউল ইসলাম তার গফ জধনর নামের ফেসবুক আইডিতে প্রফেসর সেলিমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘নীতিমালা প্রনয়ন কমিটির আহবায়ক কি মাল খায়া টাল হয়া নীতিমালা করছে?’। অপর বরখাস্ত হওয়া কর্মচারী নুরআলম মিয়া তার ঘঁৎধষধস ওংষধস নামের আইডি থেকে রবিউল ইসলামের ওই কমেন্টে মন্তব্য করেন, ‘না খাইলে আবার এরকম হওয়ার কথা না’। তিনি আরো বলেন, ‘তাইতো কই এত খাই নেশা হয়না ক্য’। রবিউল ইসলাম, অন্য এক স্ট্যাটাসে প্রফেসর সেলিমকে সুইপারের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘সুইপার মিলন বাস্পো যদি নীতিমালা প্রনয়ন কমিটির আহবায়ক হইতো তাও এ রকম ফালতু নীতিমালা হইতো না’। এই স্ট্যাটাসেও বাজে মন্তব্য করেন কর্মচারী নুর আলম মিয়া। এছাড়াও অপর কর্মচারী মালেক মিয়াও ওই শিক্ষকের নামে বাজে মন্তব্য করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উক্ত তিন কর্মচারীকে কারন দর্শানোর পরেই তারা তাদের ওইসব ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাক্টিভেট করে দিয়েছেন। তবে রবিউল ইসলাম নতুন অন্য একটি আইডি গফ. জধনর নামে অপর একটি আইডি থেকে এখনও নানা মন্তব্য করে যাচ্ছেন ফেসবুকে। এছাড়াও নুর আলম তার ফেসবুক আইডি বাদ দিয়ে অন্য একটি আইডি চালু করেছেন।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত রবির সাথে কথা বললে তিনি বলেন, “আমি স্ট্যাটাস দিয়েছি কিনা এই বিষয়ে কোন তদন্ত ছাড়াই আমাকে সহ আরো কর্মচারীকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। আমাকে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন থেকে হুমকি দেওয়া হতো যদি আমরা আন্দোলন থেকে সরে না যাই তাহলে প্রশাসন আমাদেও বিরুদ্ধে যেকোন ব্যবস্থা নিবে। তারা আমদেরকে উদ্যেশ্যপ্রণোদিতভাবে বহিস্কার করেছে।”
অপর বহিস্কৃত কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি নুর আলম জানান,“আমরা তিন দফা দাবিতে গত দুই মাস থেকে আন্দোলন করছি। এই আন্দোলন থামানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়েছে।সরকারী চকরির নীতিমালা অনুযায়ী কাউকে বরখাস্ত করতে হলে তার কিছু প্রক্রিয়া আছে যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের ব্যপারে অনুসরণ করেনি।##
কালের কাগজ/প্রতিনিধি/জা.উ.ভি