টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:২১ আগস্ট-২০২২,রবিবার।
টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলের ফুলবাগচালা এলাকায় বনায়নের সময় ফরেস্টার ও স্থানীয় কৃষকদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বনকর্মকর্তা ৩রাউন্ড ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করেছেন। এই ঘটনায় রেঞ্জকর্মকর্তাসহ ৮জন এবং ৪জন কৃষক আহত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেছেন। জানা যায়, মধুপুরের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দোখলা রেঞ্জের চাঁদপুর বিটের ফুলবাগচালা এলাকার প্রাকৃতিক বন কয়েকবছর আগেই শেষ হয়েছে। সেই জমিগুলো পূর্বে দায়িত্বপালনকারি বনের লোকজনের সহযোগিতায় চাষাবাদ করছেন স্থানীয় কৃষকরা। পাহাড়ি উচু ভূমিতে কলা আনারস চাষে ব্যয় নির্বাহ করতে ব্যর্থ কৃষকরা ওই জমিগুলো জামালপুর উপজেলার সমভ্রান্ত ব্যক্তিদের নিকট বাৎসরিক এককালিন টাকার বিনিময়ে লিজ দিয়েছেন। এর ফলে তারা বনের পতিত জমিগুলোতে বাণিজ্যিক ভাবে আনারস, কলাসহ নানা ফসল আবাদ করছে। সেই জমিতে শনিবার সকালে কলাগাছ কেটে ধ্বংস করে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা দিয়ে বনায়ন কার্যক্রম শুরু করে বনবিভাগ। এতে বনকর্মকর্তা-কর্মচারি, পুলিশ, সিএফডবিøউ সহ শতাধিক লোক অংশ নেন। স্থানীয়রা তাদের চোখের সামনে ব্যাপক ব্যয়ে সৃজিত ফসল ধ্বংস হতে দেখে দলবদ্ধভাবে হামলা চালায়। নামপ্রকাশ না করার শর্তে বনবিভাগের কর্মকর্তারা জনান, মধুপুর বনাঞ্চলের বন ধ্বংস করে জায়গা বেদখল করে চাষাবাদ করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এদের মধ্যে অনেকেই জামালপুরের লোকজনের কাছে বনের জায়গা লিজ দিয়ে টাকা গ্রহণ করেছেন। সেই জায়গায় ২০২০-২১ সালেও বনায়ন করা হয়েছিল। সেখানে সাইনবোর্ড বিদ্যমান রয়েছে। সেই গাছগুলো কেটে সেখানেও বিভিন্ন ফসল আবাদ করছে দখলদাররা। ওই জায়গাতেই পুনরায় বনায়ন করার জন্য দুই ট্রাক্টর ভরে চারা নিয়ে রোপন করা হচ্ছিল। দেড়ঘন্টার মতো সময় চারা রোপন করা সম্ভব হয়েছিল। এরপরই স্থানীয়রা চারদিক দিয়ে ঘেরাও করে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিশোঠা নিয়ে হামলা চালায়। এতে ফরেস্টারসহ ৮জন আহত হয়েছে। এদিকে ফুলবাগচালা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সামিউল আলম মজনুসহ এলাকাবাসী জানান, বনবিভাগ বনায়ন করলে আমরা সহযোগিতা করবো। কোন জনপ্রতিনিধিকে না জানিয়ে এমনকি কৃষকদেরকেও অবহিত না করে হঠাৎ করেই শনিবার সকালে বনকর্মকর্তা, পুলিশ ও কমিউনিটি ফরেস্ট ওয়ার্কার নিয়ে এসে কলা গাছ ধ্বংস করতে থাকে। উচ্চ মূল্যে সার, চারা কিনে শ্রম দিয়ে অর্জিত কলা গাছ কর্তন করতে দেখে কৃষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে হামলা করেছে। এ সময় বনকর্মকর্তারা ৪রাউন্ড গুলিও ছুড়েছে। এতে স্থানীয় ৪জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় ৩০জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২শাতধিক নারী পুরুষকে আসামী করে বন বিভাগ মধুপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার বাদি হয়েছেন চাঁদপুর বিটের বিট কর্মকর্তা ফরেস্টার মো. লুৎফর রহমান। ফরেস্টার লুৎফর রহমান বলেন, আমরা বনায়ন করতে গিয়েছিলাম। দুই শতাধিক নারী-পুরুষ দা, লাঠি, লোহার রডসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে জানমাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে দোখালা রেঞ্জের ফরেষ্টার ইসমাইল হোসেন ৩রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছেন। আমাদের অনেকেই আহত হয়েছেন। থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
৯.