মুহাম্মদ জুবাইর, টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি:০৩ ফেরুয়ারী-২০২০,সোমবার।
ইয়াবার কারণে বাংলাদেশ থেকে বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা মিয়ানমারে পাচার হয়। ইয়াবা কারবারিরা সমাজ ও দেশের শত্রু। তাদের নামাজও কবুল হবেনা। শুধু এক বছরে কক্সবাজার জেলায় ২৮০ জন লোক পুলিশের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে মারা গেছেন। থাইল্যান্ড ও চীনের তুলনায় এদেশে নিহতের সংখ্যা এখনও অনেক কম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গী, মাদক ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স নীতি ঘোষনা করেছেন। এই তিনটি বন্ধ করতে পারলেই ২০২১ সালে পুরোপুরি সমৃদ্ধি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে।
এদেশে কোন জঙ্গী আস্থানা হবেনা। ২০০০ সালের পূর্বে বাংলাদেশে কোন জঙ্গী ছিলনা। মাদ্রসাগুলোতে জঙ্গী শিক্ষা দেওয়া হয়না। কিন্তু কিছু মৌলভীরা মাহফিলে জঙ্গীর কথা বলে ধর্মপ্রাণ যুবকদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। যে কোন ধর্মের নামে জঙ্গীরা অশিক্ষা ও কুশিক্ষার ফসল।
তিনি আরো বলেন, প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আবারও যুদ্ধ ঘোষনা করছি। পুলিশ সদস্যরা ভাল কিংবা নিরপরাধ লোককে হয়রানী করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বড় সংঘবদ্ধ চক্র। তাদের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে হবে। যারা আত্মসমর্পন করেনি এখনো মাদক ইয়াবা ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের আরামে কিংবা পরিবার নিয়ে সুখে থাকতে দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ও চরম আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকাল ৩ টায় টেকনাফ সরকারি কলেজ মাঠে টেকনাফ উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের উদ্যোগে সমাবেশ ও ২১ জন মাদক ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপরোক্ত কথাগুলো বলেনছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার)।
সভায় কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অব্যাহত থাকবে। তাদের রেহাই নেই, ইয়াবা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ কাজে পুলিশকে অনেকে বিতর্ক করতে চাই। তাই মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়ে কেউ আক্রান্ত হলে চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্য মাদক ব্যবসায়ী আত্মীয়দের বাাঁচাতে চেষ্টা করলে তাদের ছাড় নেই।
ডিআইজিসহ সংশ্লিষ্ট অতিথিবৃন্দরা ফুল দিয়ে ২১ ইয়াবা ব্যবসায়ীকে বরণ করে নেন। আত্মসমর্পনকারীরা হলেন, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মৌলভী পাড়ার মৃত লাল মিয়ার পুত্র আবুল কালাম প্রকাশ কালা সওদাগর (৪৯), মৃত আমির হোসেনের আবদুল আমিন আবুল(৩৯), সাবরাং লেজির পাড়ার মৃত মকতুল হোসেনের পুত্র মো. ইদ্রিস(৫৭), টেকনো পৌরসভার চৌধুরী পাড়ার আবদুল জলিলেট পুত্র মো. ইসমাইল (৩১), সাবরাংয়ের খয়রাতি পাড়ার আবুল কালামের পুত্র মো. সাদ্দাম (২৭), সদর ইউনিয়নের মৌলভী পাড়ার সোলতান আহমেদের পুত্র বশির আহমদ (৪০), সাবরাংয়ের সিকদার পাড়ার মৃত ছেয়দুর রহমানের পুত্র আবদুল গফুর (২৬), সদরের মৌলভী পাড়ার ফজল আহমেদের পুত্র মো. রিদুয়ান (২২), সদরের উত্তর লম্বরির জহির আহমদের পুত্র মো. তৈয়ুব প্রকাশ মধু তৈয়ুব (৩৮), হ্নীলা ফুলের ডেইল এলাকার ফকির আহমদের পুত্র নুর মোহাম্মদ (২৮), সিকদার পাড়ার নুর কবির এর পুত্র ইমাম হেসেন (৩০), হোয়াইক্যং উত্তর পাড়ার আবদুল শুক্কুর এর পুত্র ফরিদ আলম (৪৮), কক্সবাজার ঝিলংজার আবুল হোসেন সওদাগরের পুত্র ইমাম হেসেন(৪৩), সদর ইউনিয়নের মৌলভী পাড়ার ফজল আহমদের পুত্র আবদুর রাজ্জাক(৩০), হোয়াইক্যংয়ের মহেশখালীয়া পাড়ার মৃত নুরুল ইসলামের পুত্র শাহাদত হোসেন(২৮), সদর ইউনিয়নের মৌলভী পাড়ার সৈয়দ হোসেনের পুত্র মো. রাসেল প্রকাশ হাজী রাসেল(২৯), সদর ইউনিয়নের মৌলভী পাড়ার রুহুল আমিনের পুত্র ফজল করিম(২৬), পৌরসভার পল্লান পাড়ার কামাল হোসেনের পুত্র আবদুল নুর(৩৯), বিজিবি ক্যাম্ম মাঠপাড়ার ফজলুর রহমানের পুত্র মো. জাহেদ উল্লাহ(২৪), সাবরাং সিকদার পাড়ার হাজী আমির হোসেনের পুত্র মো. হোসন প্রকাশ কালু (২৮), হ্নীলা ইউনিয়নের উলু চামরী এলাকার আবুল কালামের পুত্র মিজানুর রহমান(২৩)। এর আগে আত্মসমর্পণ কারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা কক্সবাজার জেলা পুলিশের নিকট ২১ হাজার পিস ইয়াবা ও ১০ টি দেশীয় তৈরি অস্ত্র হস্তান্তর করেন।
সভায় বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক তোফায়েল আহমদ, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমদ বাহাদুর, টেকনাফ আল জামেয়া আল ইসলামীয়া মাদ্রাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি মোঃ কিফায়ত উল্লাহ শফিক, টেকনাফ পৌর মেয়র হাজী মোহাম্মদ ইসলাম, উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি নুরুল হুদা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পন করেছিল। এটি দ্বিতীয় দফা আত্মসমর্পন অনুষ্ঠান।