রামপ্রসাদ সরকার দীপু, ঘিওর( মানিকগঞ্জ):০৩ মে-২০২০,রবিবার।
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের চলতি মৌসুমে মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। অল্প খরচে স্বল্প সময়ে মিষ্টি কুমড়া আবাদ করে এলাকার কৃষকেরা লাভমান হচ্ছে। ফলে এলাকায় দিন দিন বৃদ্ধি পাছ্ছে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ। মানিকগঞ্জের ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয়, সিংগাইর, সাটুরিয়া ও হরিরামপুর এলাকায় প্রায় তিন হাজার চাষি অন্যান্য ফসলের সাথে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করে তাদের সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। অল্প পুজি খাটিয়ে তারা তিনগুন টাকা লাভ করছে। ফলে মানিকগঞ্জে কৃষকদের চোখেমুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জ জেলাতে ৮শ’ ৫৭ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। মিষ্টি কুমড়ার পাশাপাশি আলু, বাঁধাকপি, বেগুন ,ফুলকপি , পেয়াজ কাচামরিচ,আবাদ করে চাষি সফল হয়েছে।একই জমিতে মাসের মাঝামাঝি সময়ে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ বীজ বপন করে। চৈত্র মাস থেকে জ্যৈষ্ট মাস পর্যন্ত মিষ্টি কুমড়ার ফলন ব্যাপকভাবে হয়। অন্যান্য ফসলের সঙ্গে কুমড়ার আবাদ কররে এতে কৃষকের আলাদা কোন খরচ করতে হয়না।
সরেজমিন দেখা গেছে, জেলার ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয়, হরিরামপুর, সাটুরিয়া, সিংগাইর উপজেলার কমবেশি কুমড়ার চাষ হয়ে থাকে। তবে ঘিওর উপজেলার বালিযাখোড়া, চঙ্গশিমুলিয়া, মাইলাগি, সিধুঁনগর, বড়বিলা, এলাকায় উল্লেখ্যযোগ্য হারে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়। এখানকার উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া মানিকগঞ্জ কাঁচা বাজার, আড়ত, আশুলিয়ার বাইপাইল সবজি আড়ত ও রাজধানীর কাওরান বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি করছেন কৃষকেরা। গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপক ভাবে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ বেড়ে গেছে। বালিয়াখোড়া গ্রামের মইজুদ্দিন ২ বিঘা , সিধুনগর গ্রামের ২ বিঘা এবং চঙ্গশিমুলিয়া গ্রামের আজাহার ৩ বিঘা জমিতে মিষ্টি লাউ আবাদ করেন। ২ বিঘা জমিতে আগাছা দমন, বীচ বপন সার দিয়ে প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার টাকার মিষ্টি কুমরা বিক্রি করেছেন। আরো প্রায় ২০/২২ হাজার টাকার কুমড়া জমিতে আছে। গড়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা লাভ হবে। তবে অন্যান্য ফসলের চেয়ে মিষ্টি কুমড়া খরচ অনেক কম হয়। কাজেই এলাকার কৃষকেদের কুমড়া চাষে আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে। পয়লা গ্রামের কৃষক হেলাল জানান, এক বিঘা জমিতে সবোচ্চ ১২শ’ থেকে ১৪’ কুমড়া পাওয়া যায়। প্রতিটি কুমড়া আকার ভেদে ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত পাইকারী ক্ষেত থেকেই বিক্রি হয়। তাদের বাড়তি ঝামেলা বা অন্যান্য খরচও নেই। পাইকারী ক্রেতা মজনু মিয়া জানান, অন্যান্য এলাকার চেয়ে এখানকার মিষ্টি লাউ অনেক মিষ্টি এবং অনেক সুস্বাধু। এছাড়া আকারও অনেক বড় বলে ঢাকার পাইকারী বাজারে চাহিদা। এ পর্যন্ত মজনু প্রায় ৩ লাখ টাকার কুমড়া বিক্রি করেছে। ঘিওর, সিংগাইর ও দৌলতপুরে ব্যাপকভাবে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানীতে মিষ্টি কুমড়া কেনার কারনে বর্তমানে এলাকার কৃষকেরা ভাল দাম পাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ বিপুল হোসেন জানান, দৈনিক কালের কাগজকে জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে ঘিওরের ৭টি উপজেলাতেও মিষ্টি কুমড়ার আবাদ বেড়েছে। তবে পয়লা, বালিয়াখোড়াতে সবচেয়ে বেশি কুমড়ার আবাদ হয়েছে। বাষ্টিয়া গ্রামের করিম মিয়া প্রায় ১০ বিঘা জমিতে এবং পয়লার বাইলজুরি গ্রামে আনোয়ার ৭ বিঘা এবং এবং আর্শেদ ৮ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছে। ফলন ভাল হবার কারনে অন্যান্য কৃষকরাও মিষ্টি কুমড়ার আবাদে ঝুঁকে পরছেন। চলতি মৌসুমে ৮০ হেক্টর জমিতে কুমড়ার আবাদ করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ- পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কৃষিবিদ আশরাফউজ্জামান দৈনিক কালের কাগজকে জানান, এবার আবহায়া অনুকুলে থাকায় মিষ্টি কুমড়ার আবাদ ভাল হয়েছে। তবে এলাবার কৃষকেরা পুলকপি, আলু, পেয়াজ, চাষের সঙ্গে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছে। কম খরচে ভালো লাভ পাচ্ছে। তাই দিন দিন কুমড়া আবাদে জেলার ৭টি উপজেলার কৃষকেরা কুমড়া আবাদে ঝুঁকে পরেছে। আমরা সার্বক্ষনিক মনিটরিং করছি। এবং কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তবে আগামীতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ আরো বেড়ে যাবে।