শাহজাহান বিশ্বাস, মানিকগঞ্জ। ১২ এপ্রিল ২০১৯,শুক্রবার।
মুসলমানদের দু’টি ঈদ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপুঁজা হচ্ছে বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব। এর সাথে এখন যোগ হয়েছে বৈশাখি উৎসব। ঈদ যেমন আনন্দের। তেমনি বৈশাখ এখন আনন্দের উৎসবে পরিণত হয়েছে। পৃথক-পৃথক সময়ে ঈদ এবং দুর্গাপুঁজা অনুষ্টিত হয়ে থাকে। আর বৈশাখি উৎসব হিন্দু, মুসলিম, বৈদ্য-খৃষ্টান সবাই এক সাথে পালন করে থাকে। বৈশাখ মানেই উৎসব, ঘুরা-ঘুরি আর কাঁচা পিয়াজ, মরিচের সঙ্গে পান্তা-ইলিশের সকালের নাস্তা।এ উৎসবের আমেজ যেন গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। নারী-শিশুসহ সকলেই প্রস্তুুতি নিচ্ছে বৈশাখি উৎসব পালনে।
সাধ্যানুযায়ী কেনা হচ্ছে বৈশাখি নতুন পোশাক। বাজারের কাপড় ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানে নারীদের জন্য বৈশাখি শাড়ি, পুরুষদের জন্য গামছা-পানঞ্জাবি এবং শিশুদের জন্য রঙবেরঙের হরেক রকমের বৈশাখি নতুন পোশাক তোলে দোকান সাজিয়ে বসে আছেন। পয়লা বৈশাখে পছন্দের পোশাকটি কিনতে দোকান এবং শফিং মলগুলোতে এখন ক্রেতাদের ভিড়। প্রত্যেকেই নিজস্ব রুচির পোশাকটি কিনে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে গ্রামাঞ্চলে বৈশাখের আগের দিন মুল বেচা-বিক্রি শুরু হবে বলে দোকানিরা জানিয়েছেন । ঝড়-বৃষ্টির কারণে গ্রামাঞ্চলের দোকানগুলোতে বেচা-কেনায় কিছুটা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে দোকানিরা জানিয়েছেন।
আর মাত্র একদিন পরেই শুরু হবে বাংলা নতুন বছরের যাত্রা। আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে বাঙালি বরণ করে নেবে নতুন বছরকে। সকালের নাস্তায় থাকবে পান্তা-ইলিশ আর পরনে থাকবে বৈশাখি নতুন পোশাক। ক্রেতাদের এই পোশাকের চাহিদা মেটাতে মানিকগঞ্জ শহর ও উপজেলার বিভিন্ন মার্কেটের দোকানগুলোতে আমদানি করা হয়েছে রঙ-বেরঙের বর্ণিল রং ও নকশার বৈশাখি পোশাক।
বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জ শহর, দৌলতপুর ,ঘিওর ও শিবালয় উপজেলার আরিচা ঘাট, বরংগাইল, টেপড়া ও উথলী বাজার ঘুরে দেখা মিলেছে বৈশাখি কেনা-কাটার ব্যস্ততা। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে প্রায় প্রতিটি দোকানেই আনা হয়েছে নতুন নতুন রং ও ডিজাইনের শাড়ি সালোয়ার-কামিজ কুর্তা, ফতুয়া,টি-শার্ট, গামছা, পাঞ্জাবি ও ওড়না।
বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, পোশাকের বাজার এবার সাদা রঙের দাপট। তবে লাল-সাদা রঙের পোশাকের চাহিদা আগের মতই রয়ে গেছে বলে জানান বিক্রেতারা। বর্ণিল রঙের পোশাক-পরিচ্ছদের উপস্থিতিও বেশ নজর কাড়ার মতো। নিন্ম আয়ের মানুষগুলো ভিড় করছেন ফুটপাতের দোকানগুলোতে।
বিক্রেতারা বলছেন, পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে এক সপ্তাহ আগে থেকে দোকানে পোশাক তুলতে শুরু করেছেন তারা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের নকশার পোশাক চলে এসেছে। বিক্রি হচ্ছে মোটা-মোটি। বৈশাখের আগের দিন মুল বিক্রির প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
মানিকগঞ্জের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে প্রায় একই চিত্র। পোশাকে বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তুলতে বিভিন্ন নকশা ব্যবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন গান কবিতার লাইন, প্রাণী, ফুল, লতা-পাতা, নারীর অবয়ব,তালের পাখা, ঢাকঢোলের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে পোশাকের ডিজাইনে। কোনও কোনও পোশাকে আবার গ্রাম বাংলার চিরায়ত রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
আরিচা ঘাটে আনন্দ সুপার মার্কেটের দোকানদার মানিক মিয়া জানান, আমরা বৈশাখি পোশাকের মুটামুটি অনেক কালেকশনে রেখেছি। প্রথম অবস্থায় বিক্রি কম থাকলেও এখন একটু একটু করে বাড়ছে। তবে বৈশাখের আগের দিন অধিকাংশ পোশাক বিক্রি হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন।
উথলী ফরিদ সুপার মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী মামুন মিয়া এ প্রতিনিধিকে বলেন, ঈদ, পুঁজার মতো পহেলা বৈশাখেও আমরা ভাল ব্যবসা করে থাকি। তাই আগেভাগেই বৈশাখি পোশাক এনে রেখেছি। বেচাবিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দু,তিনদিন আগে থেকেই টুক-টাক বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে এখন আগের চেয়ে বেড়েছে।
আরিচা ঘাটের কাপড় ব্যবসায়ী আলামিন জানান, আমার এখানে শিশু ও টেনএজ বয়সী ছেলেদের পোশাক উঠনো হয়েছে বেশী। বিশেষ করে গেঞ্জি, পাঞ্জাবি, প্যান্ট ও টি শার্ট বেশী বিক্রি হচ্ছে।
ডাকবাংলো রোডের কাপড় ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, তার দোকানে শিশু ও নারীদের পোশাক উঠনো হয়েছে বেশী। বৈশাকে ক্রেতাদের কাছে কোন ধরনের পোশাকের চাহিদা বেশী জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে ধরনের কাপড়ই আমরা আনিনা কেন অধিকাংশই শেষ হয়ে যায়।
তবে বৈশাখে যেহেতু আবহাওয়া গরম তাই সুতি কাপড়ের চাহিদা বেশি। খাদি,লিনেন, ও তাঁতের কাপড়ও বিক্রি হচ্ছে। এসব পোশাকে এমব্রয়ডারি, ব্লক, স্কিন প্রিন্ট, হাতের কাজ ব্যবহার করা হয়েছে।
আরিচা ঘাটের কাপড় ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ কন্ডু জানান, বৈশাখ উপলক্ষে এবার দোকানে অনেক আইটেমের কাপড়-চোপড় উঠানো হয়েছে। কিন্ত আরিচার বারোনির মেলা এবং প্রতিদিন বিকালে ঝড় আসায় বৈশাখি বেচা-কেনায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। অন্যান্য বছর এ সময়ে যে পরিমাণ বিক্রি করি এবার সে পরিমাণ বিক্রি করতে পারছি না। আজ-কাল এ দুদিন বৈশাখি কেনা-বেচা হবে। এরপর এসব পোশাক আর কেউ কিন্তে চাবে না।
ক্রেতা সোহেল বলেন, ঈদের দিন নতুন পোশাক না পড়লে যেমন ঈদ মনে হয়না। তেমনি পহেলা বৈশাখে নতুন পোশাক না পড়লে মনে নতুনত্ব জাগেনা। পহেলা বৈশাখে নতুন পায়জামা-পাঞ্জাবি পড়ে ঘুরে বেড়াতে খুবই মজা লাগে।
কালের কাগজ/প্রতিনিধি/জা.উ.ভি