
মাহমুদুল হাসান চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) থেকে:২৮ মে-২০২০,বৃহস্পতিবার।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার খাসপুখুরিয়া ইউনিয়নে মিটুয়ানী ও খাষপুখুরিয়া গ্রাম বাঘুটিয়া ইউনিয়নের রেহাইপুকুরিয়া ও চরবিনানই গ্রাম জুড়ে শুরু হয়েছে যমুনা নদীর ভাঙ্গণ। গত ৩ সপ্তাহের এ ভাঙ্গণে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। তাদের যাওয়ার কোন জায়গা না থাকায় তারা আশ্রয় নিয়েছেন পাশের রেহাইপুখুরিয়া গ্রামের পাকা সড়কসহ বিভিন্ন গ্রামের রাস্তার ধারে। স্ত্রী,সন্তান ও গবাদি পশু ও ঘরবাড়ি নিয়ে এ সব মানুষ খোলা আকাশের নিচে অথবা টিনের ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আজ ২৬ মে ২০২০ তারিখ সকাল বেলা নদীর ভাঙ্গনে মিটুয়ানি কবরস্থানে মৃত ব্যক্তির লাশ জুলছে। এদৃশ্য দেখে অনেকেই সৃথবির হয়ে যাচ্ছে, এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে এ গ্রামের একটি কবরস্থান,একটি মসজিদ,২০টি তাঁত ফ্যাক্টরী ও এক কিলোমিটার পাকা সড়ক। প্রশাসন থেকে এ পর্যন্ত তাদের কোন খোজ নেওয়া হয়নি দাবি ভুক্তভোগিদের। দেওয়ানগজ বাজার, ব্রিজ,শতাধিক বাড়ি,তাতীপারা,চেয়ারম্যান বাড়ি,পাকা কাচা সড়কসহ মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাঙ্গন কবলে।

করোনাবাইরাস, ঘুর্ণিঝড় আম্পান ও নদী ভাঙ্গন আতংকে ঈদ ম্লান যমুনা পারের মানুষের। সবকিছু মিলিয়ে নদী পারের মানুষ তাদের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে,ঘড় বাড়ি,আসবার পএ,তাতমেশিন ও বাজারের দেকানপাট ও মালামাল নিয়ে এদের অনেকে এখন মাথা গোজার ঠাই হারিয়ে পথের ভিখারীতে পরিণত হচ্ছে দেখার কেউ নেই। তাদের দাবি মাননীয় প্রধান মণ্তী আপনি কোথায় আমরা সাহায্য চইনা এান চাইনা ভাঙ্গন রোধ চাই। কবরস্থানে মৃতব্যক্তির লাশ আর জুলন্ত দেখতে চাইনা বেড়ীবাধ বা পার শাসন দেখতে চাই,৩ কি,মি জিওব্যগ ডাম্বিং করা হলেই বদলে যাবে চৌহালীর চিএ। ভাঙ্নকবলিত মানুষ সড়কের পাশে টিনের ঝুঁপরি ঘরে গাদাগাদি করে ছোট ছোট শিশু সন্তান নিয়ে অতিকষ্টে দিন যাপন করায় সেখানে চরম মানবিক বিপর্যয় ঘটছে। শুধু তাই নয়,যমুনা গর্ভে সড়ক বিলীন হওয়ায় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও পথচারীরা বাধ্য হয়ে কারো বাড়ির উঠন অথবা ঘরের বারান্দর উপর দিয়ে যাতায়াত করছে।
এ বিষয়ে ভাঙ্গণে নিঃস্ব মিটুয়ানী গ্রামের আবু দাউদ সরকার মাস্টার,বোরহানউদ্দিন সরকার,আব্দুর রহমান,রুহুল আমীন,আব্দুল কাদের,লুৎফর রহমান,ইয়াসিন আলী,ইসমাইল হোসেন,আখলিমা খাতুন,আব্দুল হালিম,আব্দুর রহিম,আতিক মোল্লা,আব্দুল মালেক,নাসির উদ্দিন,গোলাম হোসেন,বাচ্চু মোল্লা,ফজিলা খাতুন,কামরুল ইসলাম,হারুন আরকাটি,আক্কাস মোল্লা,রহিম আরকাটি,আবু বাক্কার জানান,গত এক মাস ধরে এ গ্রামে নতুন করে ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। এ ভাঙ্গণের মাত্র গত ১ সপ্তাহ ধরে আরো তীব্র আকার ধারণ করায় শতাধিক বাড়িঘর,পাকা সড়ক,গাছপালা ও ফসলি জমি দেখতে দেখতে চোখের সামনে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। নিঃস্ব এ সব পরিবার গ্রাম ছাড়ছে কেহ পাকা সড়কে আশ্রয় নিয়েছে এর বাস্তবচিএ সরেজমিনে । তারা আরো জানান,গত ৫ বছরে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গণে চৌহালী উপজেলার খাষপুখুরিয়া থেকে বাঘুটিয়া ইউনিয়নেরর ভুতেরমোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার এলাকার সাড়ে ৪ হাজার ঘরবাড়ি, ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,৩ কিলোমিটার পাকা সড়ক, মসজিদ, ২ হাজার বিঘা ফসলি জমি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিশেষ করে গত বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যমুনার ভাঙ্গণে মিটুয়ানী, রেহাই পুখুরিয়া ও খাষপুখুরিয়া গ্রামসহ প্রায় ৩ শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন ও হুমকিতে মানচিএ, এতে শত শত মানুষ তাদের মাথা গোজার ঠাঁই হারিয়েছ, নদীর কড়ালগ্রাসে সবকিছু হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পাশের গ্রামের সড়কের ধারে আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অথবা ঝুঁপড়ি ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছে।সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় এলাকার মানুষের যাতায়াত বন্দ ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে দেওয়ানন্জ বাজারসহ দক্ষণএলাকার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। এই বয়সে ছেলে মেয়ে নাতি পুতি নিয়ে কোথায় যাব, যাওয়ার জায়গা খুজে পাচ্ছি না বললেন বৃদ্ধারা।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন মিটুয়ানী রেহাইপুকুরিয়া ও খাষপুকুরিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,মানুষজন তাদের বাড়িঘর সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে। অনেকেই পৈত্তিক ভিটা হারিয়ে নদীপাড়ে বসে আহাজারি করছে। অনেকে গাছপালা কেটে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। নদীর পানি বাড়ির ভিটা থেকে খাড়া হয়ে ৩০ ফুট নিচে নেমে গেছে। পানির ঘুর্ণাবর্ত ও ¯্রােতের ধাক্কায় বিশাল এলাকায় বড় বড় ফাটল সৃষ্টি হয়ে মূহুর্তে তা ধসে পড়ছে। এ ভাঙ্গণের তান্ডব পুরো গ্রাম জুড়ে শুরু হওয়ায় গ্রামের সর্বত্র শোকের মাতম চলছে আর এদৃশ্য দেখতে ভির জমাচ্ছে দর্শকরা।
এ বিষয়ে খাসপুখুরিয়া ইউনিয়নের লোকজন জানান, ভিটামাটি হারানো এ সব পরিবার গুলোকে মানবিক কারণ আর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে কাজ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে বলেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এসেও ভাঙ্গণ এলাকার মাপঝোক নিয়ে গেছে। কিন্তু তারপরেও এখনও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাজার, হাই স্কুল, প্রাইমারি, হাফিজিয়া মাদ্রাসা,দেড় শতাধিক বাড়িঘর, দেওয়ানগঞ্জ বাজার ভাঙ্গণের মুখে পড়েছে।
এ বিষয়ে চৌহালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও খাসপুখুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সরকার জানান,এ সব ক্ষতিগ্রস্থরা বিভিন্ন সড়ক ও পরিত্যাক্ত জায়গায় আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে ও মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। তারা দ্রæত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লোকজন এসে মাপঝোক নিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও কাজ শুরু করেনি। ফলে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা ভাংছে।