কালের কাগজ ডেস্ক:২১ জানুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। গণসংযোগে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন দাবি করে তারা বলছেন, নির্বাচিত হলে নগরবাসীর সেবা করাই হবে তাদের মূল লক্ষ্য।
সোমবার উত্তরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে প্রচারণা শুরু করেন। এর আগে সংক্ষিপ্ত পথসভায় তিনি বলেন, আমার প্রতিপক্ষ, আমার ভাতিজা তাবিথ আউয়াল বলেছেন আমি আচরণবিধি লঙ্ঘণ করছি।
তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের কথা বলবেন, আমি বলব কিভাবে এলাকার উন্নয়ন করা যায়। আমি কোনো অভিযোগ করতে চাই না, আমি চাই মানুষের সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যায়, আমি চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে। কাজেই প্রতিপক্ষ অভিযোগ করবে, আমি উন্নয়নের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেব।
নির্বাচনী গণসংযোগকালে বিজয়ী হলে ওয়াসাসহ সেবাদানকারী সব সংস্থাকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনার প্রতিশ্রুতি দেন আতিক। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচিত হলে সিটি কর্পোরেশনকে যেমন জবাবদিহিতার মধ্যে আনব তেমনি ওয়াসাসহ সব সংস্থাকেও জবাবদিহিতার মধ্যে আসতে হবে। নির্বাচিত হলে অবশ্যই সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধনে গুরুত্ব দেব।
এদিকে সোমবার সকালে মিরপুরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন উত্তরে দলটির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। এ সময় তিনি বলেন, প্রচারণায় ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। প্রতিদিন পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে।
আমাদের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বাড়ছে। আমরা দেখছি জনমত আমাদের পক্ষে রয়েছে, সাধারণ জনগণের পক্ষে রয়েছে। আমরা মনে করি, পরিস্থিতি ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এরকম থাকলে, ভোটাররা ভোট দিতে পারলে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।
তাবিথ আউয়াল তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আতিকুল ইসলামের উদ্দেশে বলেন, উনি ৯ মাস মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন। ৯ মাসে যানজট নিরসন করতে দেখিনি। এখন ৩ মাসে কী করতে পারবেন, সেটার ব্যাখ্যা উনিই দিতে পারবেন।
আতিকুল ইসলামের প্রচার : রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রচার শুরু করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। গণসংযোগকালে এক পথসভায় তিনি নগর উন্নয়নের নানা কৌশল তুলে ধরে বলেন, মানুষের প্রত্যাশা সব সেবা সংস্থাগুলোর কাজ ত্বরিতগতিতে হোক, ভোগান্তি কম হোক।
আমরা নির্বাচিত হলে সবার আগে সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করব। সিটি কর্পোরেশনের মতো ঢাকা ওয়াসাসহ সব সংস্থাকে জবাবদিহিতার মধ্যে আসতে হবে। মানুষ ভোগান্তির জন্য সিটি কর্পোরেশনের কাছে তাদের সমস্যার কথা বলবে, মানুষ চায় সিটি কর্পোরেশন সমন্বয় করুক। তাই আমরা চেষ্টা করব সব সংস্থাকে কিভাবে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা যায়।
এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে আতিকুল ইসলাম বলেন, খিলক্ষেত এলাকায় আসার পর মানুষ আমার কাছে দাবি করেছেন এখানে কোনো বাজার নেই। অবশ্যই একটি এলাকার জন্য বাজার অবশ্যম্ভাবী।
তাই কথা দিতে চাই, যদি নির্বাচিত হই এ এলাকায় একটি অত্যাধুনিক বাজার করব। এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টার করা হবে। এখানে কোনো জায়গা অবৈধ দখলে থাকলে তা দখলমুক্ত করে শিশুদের জন্য খেলার মাঠ করা হবে।
নির্বাচনী প্রচারণায় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএ মান্নান কচিসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএ মান্নান কচি, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ইসহাক মিয়া, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১ (সাধারণ ওয়ার্ড ১, ১৭, ১৮) নম্বরের প্রার্থী হাসিনা বারী চৌধুরীসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর আতিকুল ইসলাম ১৭ ও ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের খিলক্ষেত বাজার, বটতলা, আমতলা, নামাপাড়া, তেঁতুলতলা, লেকসিটি রোড, ডুমিনি, বরুয়াবাজার, বাগানবাড়ি, কুড়াতলি, ৩০০ ফুট সড়ক, মাস্তুল বড়বাড়ি, তলনা ও প্যাতিরা এলাকা দিয়ে আশকোনা এলাকায় গণসংযোগ করেন।
এদিকে দিনভর কড়াইল বস্তিতে নৌকার প্রচারণা চালিয়েছেন আতিকের সহধর্মিণী ডা. শায়লা শাগুফতা ইসলাম। গণসংযোগকালে তিনি বলেন, যেখানেই যাচ্ছি নৌকার সাড়া পাচ্ছি। মানুষ উন্নয়ন দেখতে চায়। ভোটারদের উদ্দেশে একটি কথাই বলতে চাই- উন্নয়ন হচ্ছে, নৌকায় ভোট দিলে আরও উন্নয়ন হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার যে উন্নয়ন করছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে নৌকা প্রতীকে ভোট দিন। আতিকুল ইসলাম আতিককে আবারও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের সুযোগ দিন।
এ সময় শাগুফতা ইসলাম ভোটারদের হাতে আতিকের নির্বাচনী লিফলেট তুলে দেন। গণসংযোগে কিছু মহিলা কর্মী নিয়ে বস্তির প্রতিটি ঘরে ঘরে আতিকের নির্বাচনী লিফলেট তুলে দিয়ে তিনি বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে আসুন, নৌকায় ভোট দিন। নৌকা বিজয়ী হলে আপনাদের সমস্যার সমাধান হবে।
ডা. শায়লা ইসলাম বলেন- বস্তিবাসীর একটাই চাওয়া, তাদের পানির সমস্যা, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন। আমি মনে করি, এরই মধ্যে বস্তি উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আমার স্বামী যদি বিজয়ী হন তাহলে বস্তিবাসীর জন্য অবশ্যই বিশেষভাবে কাজ করবেন।
আজ বেলা ১১টায় ঢাকা-১১ আসনের আওতাধীন ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বেরাইদ মুসলিম হাই স্কুল থেকে নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করবেন আতিক। এরপর নতুন বাজার ১০০ ফিট রাস্তা থেকে গণসংযোগ করে সাঁতারকুল, উত্তর বাড্ডা, মোল্লাপাড়া, হাজীপাড়া নির্বাচনী প্রচার করবেন তিনি।
এরপর দুপুর ২টায় বাড্ডা, মধ্যবাড্ডা, পশ্চিম নূরেরচালা, পূর্ব নূরেরচালা, উত্তর ও দক্ষিণ নয়ানগর, সোল মাইলে গণসংযোগ করবেন তিনি।
তাবিথ আউয়ালের প্রচার : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মিরপুর থেকে গণসংযোগ শুরু করেন তাবিথ আউয়াল। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, প্রচারণায় ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। প্রতিদিন পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে। ভোটাররা ভোট দিতে পারলে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের জন্য কাজ করতে হবে। আগামীতে ঢাকাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করব ইনশাআল্লাহ। আমরা দুর্নীতি, দুঃশাসন, ডেঙ্গু ও দূষণ থেকে যেমন মুক্তি চাই, সেভাবে আমরা চাই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে আমাদের মধ্যে ফিরে আসুক।
এরপর ৭নং ওয়ার্ডে পানির ট্যাংকি মোড়, হাজী রোড, শিয়ালবাড়ী রোড, ৬নং ওয়ার্ডে প্রশিকা শিয়ালবাড়ী মোড় থেকে শুরু হয়ে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় (রূপনগর শাখা), দুয়ারীপাড়া কাঁচাবাজার, মিরপুর শিল্পাঞ্চল প্রচার চালান তাবিথ।
সেখান থেকে ৩নং ওয়ার্ডে জুটপট্টি রোড, উদয়ন স্কুল রোড, ১১নং কাঁচাবাজারে গণসংযোগ করে ভাসানী হোটেলের সামনে গিয়ে শেষ করেন। পরে ৫নং ওয়ার্ডের নাভানা টাওয়ার থেকে বাইশতলা, সাংবাদিক প্লট, কালশীরোড ও আধুনিক হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত গণসংযোগ করেন। এছাড়াও ২নং ওয়ার্ডের জাগরণী ক্লাব হয়ে কালশী মসজিদ, মুসলিম বাজার, এ ব্লক, ১২নং বিআরটিসি বাস ডিপো পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার শেষ করেন ধানের শীষের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।
তাবিথ আউয়ালের পক্ষে গণসংযোগে নামেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় নেতারা। বিএনপি মহাসচিব তাবিথ আউয়ালকে সঙ্গে নিয়ে মিরপুর ৬ নম্বর সেক্টরের বাইতুল মোশাররফ জামে মসজিদ মার্কেট এলাকা থেকে গণসংযোগ করেন।
এ সময় ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দুলুসহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন। মিরপুর ২ নম্বর সেকশনে গণসংযোগের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাবিথ আউয়াল মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ আরও উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দেন।
জনসংযোগ মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকায় পৌঁছালে যুক্ত হন জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার আমিনুল ইসলাম ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মাহফুজুর রহমান খান (ব্যাডমিন্টন প্রতীক) ও তার সমর্থকরা।
দুপুরে মিরপুর-৬ নম্বর সেকশনের বিভিন্ন এলাকায় তাবিথ আউয়ালকে নিয়ে ধানের শীষের গণসংযোগ করেন বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। সেখানে এক পথসভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আপনারা দেখেছেন ৩০ তারিখ ভোট ডাকাতি করে নিয়েছে। এবার ভোট কেন্দ্রে এসে আপনাদের ভোট আপনাদের রক্ষা করতে হবে। যারা ভোট ডাকাতি করতে আসবে তাদের হাত কেটে দেবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান নগরবাসীর উদ্দেশে বলেন, জনগণের ভোট নিয়ে তাবিথ নির্বাচিত হতে চান। তিনি বিনা ভোটে মেয়র হতে চান না। আপনারা দলে দলে পহেলা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কেন্দ্রে যাবেন।
আপনাদের ভোট কেউ ঠেকাতে পারবে না। গণসংযোগকালে আরও ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুবদলের মামুন হাসান, সফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াসিন আলী, এসএ সিদ্দিকী সাজুসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা। আরও অনেকে প্রচারে অংশ নেন।
আজ সকাল ১০টায় ৯নং ওয়ার্ডের পর্বত সিনেমা হলের সামনে থেকে বারোতম দিনের মতো প্রচার শুরু করবেন তাবিথ আউয়াল। পরে দিনভর ১১, ১৪ ও ১৬নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় তিনি গণসংযোগ করবেন।সুত্র:যুগান্তর