শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি :১৫ মে-২০২০,শুক্রবার।
করোনা পরিস্থিতি ও রমজানকে সামনে রেখে চলতি মৌসুমের আম বাজারজাত করার ক্ষেত্রে সরকারীভাবে নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সে ঘোষণা অনুযায়ী ১৫ মে’র আগে বাগান থেকে আম আহরণ করা বা বাজারে বিক্রি করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কিন্তু সেই সরকারী ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে গত ১ মে থেকেই নীলফামারীর সৈয়দপুরের বাজার সয়লাব হয়ে গেছে অপরিপক্ক অথচ পাকা আমে। প্রতিদিনই ট্রাকে ট্রাকে আম আসছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। সৈয়দপুর ফল আড়তের পাইকারী ব্যবসায়ীদের দাবি প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমতি নিয়েই তারা এসব আম আমদানী করেছে। কিন্তু প্রশাসন কোনভাবেই নির্দিষ্ট তারিখের পূূর্বে এসব আম আমদানী বা বিক্রির অনুমতি দিতে পারেনা। তারপরও প্রশাসনের নাকের ডগায় সরকারী নির্দেশনাকে অমান্য করে আম আমদানী ও প্রকাশ্যে বিক্রি হলেও কৃষি বিভাগ বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ উপজেলা ও থানা প্রশাসন নির্বিকার। একারণে সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছে তাহলে কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই চলছে এই অপরিপক্ক ও ক্যামিকেলে পাকানো আমের বানিজ্য?
একটি সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর শহরের ১ নং রেলঘুমটি সংলগ্ন পাইকারী ফল আড়তের আব্দুল্লাহ্ ফল ভান্ডারের মালিক গিয়াস উদ্দিন প্রথম গত ১ মে এক পিকআপে আম আমদানী করে এবং বাজারজাত করে সফলভাবে। এতে প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষের কোন বাধা না আসায় অন্য ব্যবসায়ীরাও পরের দিন থেকে আম আনা শুরু করে। প্রতিদিন সকাল ৭ টা থেকে ৮ টার মধ্যে পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানে করে আসছে শত শত কার্টুন আম। ভলু ফল আড়ত, বিসমিল্লাহ ফল ভান্ডার, বিক্রমপুর ফল বিতান, হাজী গরিবুল্লাহ ফল আড়তসহ পাইকারী বাজারের সবগুলো দোকানেই প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কয়েকশ’ মন আম। এসব আম কাচা অবস্থাতেই সংগ্রহ করে হিট দিয়ে বা ক্যামিকেল দিয়ে পাকানো হয়েছে। ফলে আমগুলোর বাহিরের অংশ হলুদ রং ধারণ করেছে এবং কিছুটা নরমও হয়েছে। কিন্তু এর ভিতরের অংশ, আঁটি বা বিচি সম্পূর্ণভাবে পরিপক্ক হয়নি। একারণে এসব আমের যেমন স্বাদ, গন্ধ নেই তেমনি টক টক ভাব থাকায় তা খাওয়ারও অযোগ্য বা পুষ্টিহীন। এসব আম পাইকারী বাজার থেকে সকালেই ছড়িয়ে পড়ে শহরের প্রায় প্রতিটি ফল দোকানসহ মৌসুমী বিক্রেতাদের মাধ্যমে ফুটপাতগুলোতে। দেখতে আকর্ষণীয় এবং মৌসুমের প্রথম মধুফল হিসেবে ক্রেতারা সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছে এসব আম কিনতে। গুটি, গোপাল ভোগ, গোবিন্দ, জয়পুরী নামের এসব আম জাত ভেদে প্রতি কেজি খুচরা দোকানে ১২০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আড়তদারদের দাবি এসব আম সাতক্ষিরা থেকে আনা হয়েছে। কিন্ত এসময় দেশের কোথায় পাকা আম পাওয়া সম্ভব নয়। তাহলে কি এসব আম সীমান্তের ওপার থেকে চোরাই পথে আনা হচ্ছে? করোনায় সব ধরণের সীমান্ত বানিজ্য বন্ধ থাকলেও কি করে ভারতীয় আম আসছে এবং কেনই বা তা বাজারজাত করার ক্ষেত্রে প্রশাসন নজরদারী করছেনা বা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেনা? এমন প্রশ্নও অনেকের।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার শাহিনা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এসময় দেশীয় আম পাকার কথা নয়। তবে হয়তো ভারত থেকে আম আমদানী হচ্ছে। সময়ের আগেই সংগ্রহ করা এসব আম খাওয়ার অযোগ্য কি না তা নির্ধারণ করা কৃষি বিভাগের কাজ নয়। এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ব্যবস্থা নিবে।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাসিম আহমেদ কে মুঠোফোনে এ ব্যাপারে জানানো হলে তিনি বিষয়টি দেখছেন বলে জানালেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেননি।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নীলফামারী জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোঃ বোরহান উদ্দিনকে বিষয়টি অবগত করা হলে তিনি দ্রুতই অভিযান চালাবেন বলে জানান। কিন্তু ১ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তার পক্ষ থেকেও কোন উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য, রমজানের শুরু থেকে খাওয়ার অযোগ্য খেজুর ও আপেল আঙ্গুরও ব্যাপকভাবে বিক্রি করছে পাইকারী ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোন কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় এবার ক্যামিকেলে পাকানো আম আমদানী ও বাজারজাত করছে তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্রের অভিযোগ পৌর সেনেটারী ইন্সপেক্টর আলতাফ হোসেনের মাধ্যমে ফল আড়তদাররা সংশ্লিষ্ট্ সকল কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই এধরণের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে দেদারছে।