শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি :২৩ মাচ-২০২০,সোমবার।
নীলফামারীর সৈয়দপুরের নারী উচ্চ শিক্ষার অন্যতম প্রতিষ্ঠান মহিলা কলেজে কর্মচারী নিয়োগে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। ২৩ মার্চ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তুলেছেন কলেজ পরিচালনা কমিটির ২জন সদস্যসহ কয়েকজন নিয়োগপ্রার্থী। তারা এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বরাবরে নিয়োগ বাতিলের দাবিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর মহিলা কলেজের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর ৫টি পদে নিয়োগের জন্য গত বছরের ২২ নভেম্বর দৈনিক যায় যায় দিন পত্রিকায় একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে প্রতিটি পদে ১ জন করে জনবল নিয়োগের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। এর প্রেক্ষিতে গত ১৪ মার্চ কলেজে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ল্যাব সহকারী (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) পদে ৬ জন, ল্যাব সহকারী (বিজ্ঞান গবেষণাগার ২য় পদ) ৫ জন অংশগ্রহণ করে। এদিকে নিরাপত্তা কর্মী (পুরুষ), নৈশ প্রহরী (পুরুষ), পরিচ্ছন্নতা কর্মী (পুুরুষ/মহিলা) পদে মোট বেশ কয়েকজন মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে।
ল্যাব সহকারী পদ ২টির প্রার্থীদের ভাইবা পরীক্ষা শেষে নিয়োগে সংক্রান্ত বোর্ডের মিটিংকালে কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য (হিতৈষী সদস্য) ও সৈয়দপুর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মোহন ল্যাব সহকারী (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) পদের প্রার্থী মোঃ ফারুক হোসেনের বয়স বিষয়ে অভিযোগ তোলেন। তিনি এ ব্যাপারে রেজুলেশনে তার অভিযোগ লিপিবদ্ধ করার জন্য দাবি জানান। তিনি জানান, ফারুক হোসেন আবেদনের সাথে যে সার্টিফিকেট ও জন্ম নিবন্ধন প্রদান করেছেন তাতে তার জন্ম তারিখ ১১-৩-১৯৯১ ইং উল্লেখ থাকলেও মূলত তার জন্ম তারিখ ১১-৩-১৯৮৩ ইং। যা তার জাতীয় পরিচয় পত্র (ভোটার আইডি কার্ড) উল্লেখ আছে। এ সংক্রান্ত ফটোকপি প্রমান স্বরুপ তিনি মিটিংয়ে পেশ করেন। কিন্তু তারপরও গত ১৯ মার্চ অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত না করেই উক্ত ফারুক হোসেন কে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, এখানে অবশ্যই অর্থের লেনদেন হয়েছে এবং এ কারণেই তাড়াহুড়া করে নিয়োগের কাজ সম্পন্ন করা হয়। কেননা নিয়োগপ্রাপ্ত ফারুক প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ক্লার্ক সবুজের ভাই। এই সবুজকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তার বাবা আব্দুস সামাদ মারা যাওয়ার পর। এখন তার ভাইকে অর্থের বিনিময়ে বয়স অতিক্রান্ত হলেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
অভিভাবক প্রতিনিধি হায়দার আলী জানান, নিয়োগে অর্থের বিনিময় হয়েছে। যে কারণে বয়স অতিক্রান্ত প্রার্থীকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং এক্ষেত্রে যাচাই বাছাই না করতেই খুব দ্রুততার সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ওই পদে নিয়োগপ্রার্থী রেজওয়ানা পারভীন অভিযোগ করে বলেন, আমরা যারা প্রার্থী ছিলাম তাদের মধ্যে আমি অত্যন্ত ভালো পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু তারপরও অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ফারুক হোসেন কে। পরীক্ষার খাতা তদন্ত করলেই বিষয়টি প্রমানিত হবে। তিনি নিয়োগ বাতিল করে পূণঃরায় নিয়োগের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাবিনা সালাম মুঠোফোনে বলেন, নিয়ম মেনেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অর্থ লেনদেনের বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। নিয়োগ দিয়েছেন পরিচালনা কমিটি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
কলেজের সভাপতি ও নীলফামারী জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত মহিলা সংসদ সদস্য রাবেয়া আলিম মুঠোফোনে জানান, নিয়ম মেনেই নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়ে আমার কোন কিছু জানা নেই। যদি অনিয়ম পাওয়া যায় তাহলে নিয়োগ বাতিল করা হবে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিন জানান, অভিযোগের বিষয়ে খবর পেয়েছি. অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই নিয়োগ বাতিল করা হোক এবং অর্থ নয় মেধাকে মূল্যায়ন করা হোক।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোখছেদুল মোমিন বলেন, নিয়োগ বঞ্চিতরা আমার কাছে অভিযোগ করেছে। অনিয়ম হয়ে থাকলে নিয়োগ বাতিল করে পূণঃরায় নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে।