মানিকগঞ্জে পুলিশের তৎপরতায় মানব পাচার থেকে রক্ষা পেয়েছে দুই শিক্ষার্থী। নিখোঁজের চার দিন পর তাদেরকে উদ্ধার কর হয়। এ ঘটনায় পাচারকারী দলের এক নারী সদস্যকেও গ্রেপ্তার করেছে সাটুরিয়া থানা পুলিশ।

সাটুরিয়া থানাধীন গোলড়া গ্রামের মোঃ শহিদুল ইসলাম (৪৮) ও পাবনা জেলার আতাইকোলা থানাধীন গারুলিয়া গ্রামের মো: মন্টু মিয়া (৪২) (বর্তমানে গোলড়া গ্রামের আব্দুল করিম এর বাড়ীর ভাড়াটিয়া) দ্বয় বাদী হয়ে ১। নুসরাত জাহান তানজিনা (২০), পিতা-মৃত লেবু মিয়া, মাতা-রেনু বেগম, সাং-গোলড়া, থানা-সাটুরিয়া,জেলা-মানিকগঞ্জ, ২। মোসাঃ মালা বেগম @ শারমীন (৩৬), স্বামী-মোঃ খায়রুল আলম, সাং-হাজীগঞ্জ, থানা-ফতুল্লা, জেলা-নারায়নগঞ্জ, ৩। মোঃ হৃদয় (৩৫), পিতা-অজ্ঞাত, সাং-অজ্ঞাত, থানা ও জেলা-অজ্ঞাতসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জনকে আসামী করে সাটুরিয়া থানায় মানব পাচার সংক্রান্তে একটি অভিযোগ দায়ের করে।

গত ০৪/০৩/২০২৩ তারিখ দুপুর অনুমান ০২.০০ ঘটিকার সময় আসামী নুসরাত জাহান তানজিনা , মোসাঃ মালা বেগম @ শারমীন ও  হৃদয় (৩৫) এর সহায়তায় ঐ দুই শিক্ষার্থীকে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে ফুসলিয়ে পাচারের উদ্দেশ্যে ঢাকায় অজ্ঞাত স্থানে নিয়া রাখে। মালা বেগম ও হৃদয় ঐ দুই শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিভিন্ন সময় তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের দিয়ে তাদের নিয়মিতভাবে পালাক্রমে ধর্ষণ করায়। উক্ত বিষয়টি নিয়ে সাটুরিয়া থানায় দায়েরকৃত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সূত্রোক্ত মামলাটি রুজু হয়। মামলা রুজুর পর শিক্ষার্থীদের পরিবার ও পুলিশের চাপে  বুধবার সন্ধ্যার পর হৃদয় ঐ দুই শিক্ষার্থীকে বাড়ির উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। অতঃপর গোলড়া বাসস্ট্যান্ডে নামার পর সাটুরিয়া থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।

উদ্ধার হওয়া নবম ও অষ্টম শ্রেণির মাদ্রাসার ওই দুই শিক্ষার্থী জানায়, সাটুরিয়া উপজেলা গোলড়া গ্রামের লেবু মিয়ার মেয়ে নুসরাত জাহান তানজিনা (২০) অনেক দিন ধরে ঢাকায় চাকুরি করেন। পরিচয় থাকার সুবাদে নুসরাত তাদের ঢাকায় কাপড়ের দোকানে চাকুরির কথা বলে। নুসরাতের কথায় তারা দুইজন ঢাকা গিয়ে চাকুরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই ঘটনায় নুসরাত জাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেফতার হওয়া নুসরাত জাহান তানজিনা জানান, হৃদয়ের সাথে ফেসবুকে তার পরিচয়। অভাবের কারণে ঢাকায় গিয়ে হৃদয়ের কথায় তিনি বিভিন্ন হোটেলে গিয়ে দেহ ব্যবসা করেন। ওই দুই শিক্ষার্থীকে তিনি হৃদয়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীদের পরিবার ও পুলিশের চাপে তিনি তাদেরকে বাড়িতে পাঠানো কথা বলেন হৃদয়কে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে   মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার   মোহাম্মাদ গোলাম আজাদ খান পিপিএম-বার  বলেন, সাটুরিয়াতে একই দিনে দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে। মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে জানতে পারেন নুসরাত নামে এক নারী ওই দুই শিক্ষার্থীকে চাকুরির লোভ দেখিয়ে ঢাকায় পাচার করেছে। উদ্ধার হওয়ার শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, তাদেরকে অসামাজিক কাজে বাধ্য করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া দুই শিক্ষার্থীর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। এই চক্রটি গ্রামের সহজ সরল অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের চাকুরির  প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে দেহব্যবসা পরে দেশের বাইরে পাচার করে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।  সাটুরিয়া থানার মামলা নং-০৫, তাং-০৯/০৩/২০২৩ খ্রি., ধারা- মানব পাচার প্রতিরোধ ও
দমন আইন ২০১২ এর ১০(২); তৎসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০২০) ।