এইচএম মোকাদ্দেস, সিরাজগঞ্জ:২৮ এপ্রিল-২০২৪,রবিবার।
সিরাজগঞ্জে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে ইছামতি নদী খনন কাজ।এই খনন কাজে নদীর পাড়েই ফেলা হচ্ছে বালু। এদিকে পাড় থেকে বালু না সরালে নদীর পাড় ধ্বসে পুনরায় নদী ভরাট ও ফসলের ক্ষতিরও সম্ভাবনা রয়েছে। এতে একদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন অপরদিকে অপরিকল্পিত নদী খননের কারনে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেকু মেশিন ব্যবহার না করে আধুনিক ড্রেজিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হলে এই প্রকল্পের অর্থ অর্ধেকে নেমে আসতো। কৃষকের ফসলের ক্ষতি ও পুনরায় নদী ভরাট এর পরিবর্তে উত্তোলনকৃত বালু ইজারার মাধ্যমে বিক্রি, মৎস্য চাষ ও দীর্ঘ মেয়াদী খনন প্রক্রিয়ায় সরকারের এই প্রকল্প থেকে ব্যয়ের চাইতে আয় বেশি হতো। অথচ অপরিকল্পিত এই খনন কাজে সরকারের প্রায় ৫০কোটি টাকা খোয়া যাচ্ছে। এ যেন সরকারের অর্ধশত কোটি টাকা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।
সম্প্রতি রায়গঞ্জের নলকা এলাকার ইছামতি নদী খনন এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ টি বেকো দিয়ে নদী খননের কাজ করছে । নদীর পাড়েই ফেলা হচ্ছে বালু। যা পার্শ্ববর্তী ফসলি জমিতেও ভরাট হচ্ছে। এসময় উপজেলার কয়াবিল গ্রামের কৃষক হান্নান মিয়া জানান, যেভাবে নদী খনন করা হচ্ছে। এতে বৃষ্টি কিংবা বর্ষা হলে বালুর পাড় ধ্বংসে ফের নদীতেই পড়বে। এটা কেমন খনন কিছুই বুঝতে পারছি না।
জানাযায়, রায়গঞ্জ উপজেলার নলকা থেকে কাজিপুর উপজেলার সোনামুখী পর্যন্ত ইছামতি নদী খনন কাজ শুরু করেছে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। ৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কাজ বাস্তবায়ন করছে। ১২০ ফুট প্রস্থ ও ৮ থেকে ১০ ফুট গভীর করে খনন করা হচ্ছে নদীর ৪০ কিলোমিটার। বেকো মেশিন দিয়ে খনন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। এদিকে ৪০ কিলোমিটারে বালু উত্তোলন করা হয়েছে ৬ কোটি ৬৫ লাখ ঘন ফুট। বেকো মেশিন দিয়ে খননের পরিবর্তে ড্রেজিং পদ্ধতিতে খনন করলে কী পরিমাণ ব্যয় হতো? এ বিষয়ে যমুনা ড্রেজিং কোম্পানির সাথে কথা বলে জানাযায়, ৪০ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং পদ্ধতিতে খনন করলে প্রতি ঘনফুটে ২ টাকা করে ব্যয় হলে খরচ হতো প্রায় ১৩ কোটি। যা বেকো দিয়ে খননের অর্ধেকেরও অনেক কম।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট ড্রেজার ও বালু ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম শীতল জানান, সরকার এক কিলোমিটার পর পর নির্দিষ্ট পরিমানে বালু উত্তোলনের ইজারা দিলে এবং নির্দিষ্ট জায়গায় স্তুপ করে ব্যবসায়ীরা বালু বিক্রি করলে ফসলি জমির ক্ষতি হতো না। এতে নদী তীরে বালু জমাও থাকত না। নদীতে বিপুল পরিমান মাছ চাষ করা যেতো। এতে অর্থ অপচয় হতো না। আর এটা থেকে সরকারের ৫ ধরনের রাজস্ব আয় হতো। তিনি আরো বলেন, ৪০ কিলোমিটারে প্রায় ৬ কোটি ৬৫ লাখ ঘন ফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতি সেপ্টি বালুর বাজার মূল্য কমপক্ষে ৬ টাকা ঘনফুট হলে সেই বালু প্রায় ৪০ কোটি টাকা বিক্রি করা যেত। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে খনন করায় বালু বিক্রিও করা যাচ্ছে না। আর ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে খনন করা হলে তা ১০ বছরেও আর খননের প্রয়োজন হতো না। অন্যদিকে প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার মাছের চাহিদাও পূরণ হতো খননকৃত নদী থেকে। নির্দিষ্ট জায়গায় ড্রেজিংয়ে উত্তোলনকৃত বালু পরিবহনে সহজ হতো ও জেলায় বালুর চাহিদাও মিটতো।
সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক ডাঃ জহুরুল হক রাজা বলেন, নদী খননের কাজ পরিকল্পিতভাবে ইজারা দিলে খরচের কয়েক গুন রাজস্ব পেত সরকার। নদীতে মাছ চাষ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমান আয় হতো। নদীর পানি ব্যবহারের ফলে কৃষকের ফসল উৎপাদনও বৃদ্ধি পেত। নদী খননে সরকারের অতিরিক্ত অর্থ অপচয় হতো না। প্রতি বছর নদী খনন করতে হতো না, এমনকি বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড়ে কৃষকের ফসলও নষ্ট হতো না।
বেকো দিয়ে নদী খনন স্মার্ট পরিকল্পনা কিনা এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খনন কাজ আমাদের পুরনো পদ্ধতিতেই চলছে। প্রতিদিন নদীর পাড় থেকে অনেক অভিযোগ আসছে। আসলে নদী খনন করতে অবশ্যই স্মার্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। নদীর বালু ইজারা দেব কিন্তু সংযোগ সড়ক নেই। ইজারা দিতে না পারলে ওই বালু জমিতে পড়ে কৃষকের ক্ষতি হবে। তবে এই প্রকল্পের আওতায় সরকারের সঠিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চলছে। ###