আবদুল আহাদ, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :১২ আগস্ট ২০২৩,
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের গহীন পাহাড়ে প্রায় ৪ ঘণ্টার অভিযান শেষে জঙ্গি আস্তানা থেকে পুরুষ, নারী এবং শিশুসহ ১৩ জনকে আটক করেছে সোয়াট। তাদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ, ৬ জন নারী এবং ৩ শিশু রয়েছে।
শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এরআগে শুক্রবার রাত থেকে বাড়িটি ঘেরাও করে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী । কাউন্টার টেরোরিজম, সোয়াট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন হিল সাইট’।
এদিকে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় আস্তানা থেকে জঙ্গিদের আটকের পর উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে অভিযানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেন, পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান মোঃ আসাদুজ্জামান। এ অভিযানে অংশ নেন যুগ্ম কমিশনার কামরুজ্জামান, সিটিটিসির নাজমুল ইসলাম, সোয়াট কামান্ডার এডিসি জাহিদ, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. মঞ্জুর রহমান পিপিএম এবং কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুছ ছালেক প্রমুখ।
সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান জানান, তাঁদের কাছে তথ্য ছিলো ‘ইমাম মাহমুদ কাফেলা’ নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের আবির্ভাব হয়েছে। তাদের কয়েকজন সক্রিয় সদস্য কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তুলেছে। এই সংগঠনের প্রধানের নামও নিশ্চিত হওয়া গেছে। মাত্র এক সপ্তাহ থেকে তারা দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু করেছে। এখান থেকে পুরুষ, নারী ও শিশুসহ মোট ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর থানার মাইজবাড়ী গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে রাফিউল ইসলাম (২২), কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার কালনা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে হাফিজ উল্লাহ (২৫), নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার রসুলপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে খায়রুল ইসলাম (২২), তার স্ত্রী মেঘনা (১৭) এবং তাদের ১২ মাসের শিশু আবিদা। সাতক্ষীরা থানা ও জেলার দক্ষিণ নলতা গ্রামের ওমর আলীর পুত্র শরিফুল ইসলাম (৪০), পাবনা জেলার আটঘরিয়া থানার শ্রীপুর গ্রামের আব্দুছ ছত্তারের স্ত্রী শাপলা বেগম (২২) ও তার ১৮মাসের শিশু কন্যা জুবেদা ও হুজাইফা (০৬), নাটোর জেলা ও সদর থানার চাদপুর গ্রামের সোহেল তানজীমের স্ত্রী মাইশা ইসলাম (২০), বগুড়া জেলার শরিয়াকান্দি থানার নিজরলাই গ্রামের সুমন মিয়ার স্ত্রী সানজিদা খাতুন (১৮), সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার দক্ষিণ নলতা গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী আমিনা বেগম (৪০) এবং তার মেয়ে হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০)।
এসময় আটককৃতদের কাছ থেকে নগদ ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার, ৫০টি ডেটোনেটর, আড়াই কেজি বিস্ফোরক, প্রশিক্ষণ সামগ্রী ও বিপুল পরিমান জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়েছে।
সিটিটিসি প্রধান আরও জানান, এই অপারেশনের নাম সুয়াট অপারেশন অব হিলসাইট। এখানে অভিযান পরিচালনার পর কেউ পালিয়ে যেতে পারেনি। এর আগে এখানে যারা আসা যাওয়া করতো তাদের নামের তালিকা আছে। তবে তিনি এই অভিযানে জঙ্গি সংগঠনকে অংকুরেই নস্যাৎ করা হয়েছে বলে জানান।
এদিকে কর্মধা ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার মাহমুদা আক্তার জানান, যে বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে ওই বাড়ির বাসিন্দা এরা নয়। গত কয়েকদিন থেকে এরা এখানে বসতি গড়েছে। এলাকার কারো সাথে খুব একটা মিশতো না। চলাচল ছিলো সন্দেহজনক।
কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ জানান, তার ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের বাইশালী বাড়ি নামক পাহাড়ী এলাকায় এরা বসতি শুরু করেছিলো। তারা কিভাবে এখানে এসেছে তা তিনি নিশ্চিত নন। তবে, বসতি স্থাপনে খুব বেশি দিন না হওয়ায় এলাকায় তেমন একটা জানাজানিও হয়নি।