নিজস্ব প্রতিবেদক:,১০ ডিসেম্বর-২০২৪,মঙ্গলবার।
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাভলু আহমেদ (৩৭)কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে উপজেলা সদরে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে।
বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যা, হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও হরতালের ঘটনায় পুরো উপজেলাজুড়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের মাঝে। যে কোন সময় আরো বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংর্ঘের আশংকায় শংকিত এলাকাবাসী।
গতকাল মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) এই হরতাল ডাকে ঘিওর বাজার ব্যবসায়ীরা এবং নিহতের কুস্তা গ্রামবাসী। হরতালে সমর্থন দেন উপজেলা বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মী।
সেমাববার দিবালোকে ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর সামনে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাভলু আহমেদ (৩৭) কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসময় মারাত্মক আহত হন আরও ৬ জন।
জানা গেছে, উপজেলার কুস্তা এবং উপজেলা মোড়ের বটতলা এ দুই গ্রামবাসীর মধ্যে এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও প‚র্ব শত্রুতার জের ধরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। নিহত লাভলু আহমেদ ২০০৩ সালে ঘিওর উপজেলা ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘিওর উপজেলা সদরের সব দোকানপাট বন্ধ ছিল।
উপজেলা সদর থেকে বিভিন্ন রুটে যানবাহন চলাচল ছিল খুবই কম। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘিওর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান খান কুদরত ও উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানি (দুজনেই কুস্তা গ্রামের বাসিন্দা) হরতালের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্র্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার একদিন পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কোনো আসামী গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। এদিকে সকালে উপজেলার বাসষ্ট্যান্ড, বাজার, রাস্তার মোড়ে টায়ারে আগুন লাগিয়ে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। উপজেলা সদরের কয়েকটি স্পটে বাড়তি সতর্কতার সাথে পুলিশকে টহলরত অবস্থায় দেখা গেছে।
লাশের ময়না তদন্ত শেষে বিকেল সাড়ে চারটায় কুস্তা সামাজিক কবরস্থানে নিহতের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। নিহত লাভলুর মরদেহ দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে রেখে বিক্ষোভ করেছেন কুস্তা গ্রাম ও স্থানীয় বাসিন্দারা। এসময় বিক্ষুদ্ধরা উপজেলা উপজেলা সদরের বটতলা এলকায় ৪টি বসত বাড়ি ও একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়েছে।
হামলার শিকার মো: সোলাইমানের বাড়ি, ইউপি সদস্য সেলিনা আক্তারের বাড়ি, আরজু বেপারীর বাড়ি, মো: রায়হানের বাড়ি, মুরাদের ডেকোরেটর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর চালিয়েছে। উপজেলার বটতলা মোড় এলাকার বাসিন্দা আরজু বেপারীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ঘিওর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফায়ারম্যান মো: সিদ্দিক আলী জানান, খবর পেয়ে আরজু বেপারীর বাড়িতে ঘটনাস্থলে দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। প্রাথমিক ধারনা আসবাবপত্র, এসিসহ কমপক্ষে ৫ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।
হামলার শিকার সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মো: সোলাইমান মিয়া বলেন, আমার বাসায় ব্যাপক ভাংচুর চালিয়ে দরজা, ভেঙে আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে, মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাড়ি ঘরে লুটপাট চালায়। ভয়ে আমি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অন্য ঘরে পালিয়ে ছিলাম। কমপক্ষে একশো জন লোক এই তান্ডপ চালায়। তারা সবাই কুস্তা গ্রামের বাসিন্দা।
ঘিওর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুস্তা গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান কুদরত বলেন, ৫ আগস্টের পর উপজেলা মোড়ের কয়েকজন চিহিৃত সন্ত্রাসী, যারা আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। তারাই এখন বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করছে। আসলে ওরা সন্ত্রাসী। প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রদলের সাবেক সাধারন সম্পাদককে কুপিয়ে তারা হত্যা করেছে। তিনি আরো বলেন, নিহত লাভলুর মরদেহ নিয়ে আসার সময় উপজেলা মোড়ে হট্টগোলে যদি দলীয় কোন সদস্য জড়িত থাকে, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনা এখনো পর্যন্ত ভুক্তভোগীর পরিবার মামলা করেনি। থানায় মামলার করলে অভিযোগের ভিত্তিতে আসামিদের দ্রুত সময়ে গ্রেফতার করা হবে। ভাংচুরের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়িতে আমি গিয়ে পরিদর্শন করে আসছি। হরতালে উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ বেশ গুরুত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছে।