Logo
ব্রেকিং :
নবাবগঞ্জে খুনের ঘটনা, ৫ ঘন্টায় খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ  রাণীশংকৈলে ২ ইটভাটা মালিককে কাঠ পোড়ানোর দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা  সিরাজগঞ্জে ফুডগ্রেডবিহীন ড্রামে ভোজ্য তেল ব্যবহারের প্রতিবাদে ক্যাব এর মানববন্ধন  সিরাজগঞ্জে আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী নাসিম রেজা নূর দিপু সিরাজগঞ্জে সাত বছর পর শিশু ধর্ষণ ও হত্যার রহস্য উদঘাটন  গ্রেফতার -২ সাবেক এমপি’র ছবি অবমাননায় নিন্দা জানিয়েছে নাগরপুর উপজেলা আ.লীগ সিরাজগঞ্জে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ মামলার  পলাতক আসামী গ্রেফতার ঘাটাইলে কিশোরীকে ২২ দিন আটকে রেখে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ পুলিশ মামলা না নেওয়ায় আদালতে বিচার দাবি টাঙ্গাইলে জলাশয় ভরাটের প্রতিবাদে মানববন্ধন নাগরপুরে বসত করে আগুন দেওয়ার অভিযোগ 
নোটিসঃ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : আলহাজ্ব এ.এম নাঈমূর রহমান দূর্জয় ,সম্পাদক ও প্রকাশক মো: জালাল উদ্দিন ভিকু,সহ-মফস্বল সম্পাদক মো: জাহিদ হাসান হৃদয়

প্রধান শিক্ষকের কারণে পরীক্ষা দিতে না পারায় ছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা

রিপোর্টার / ১০৫ বার
আপডেট সোমবার, ১ মে, ২০২৩

শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:০১ মে-২০২৩,সোমবার।
প্রধান শিক্ষকের সেচ্ছাচারিতায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারায় গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এক ছাত্রী। পরিবারের প্রচেষ্টায় রক্ষা পেলেও অভিযুক্ত শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্বিকার থাকায় জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা এব্যাপারে প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবী করেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (৩০ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১০ টায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের নিজ সুন্দর খাতা গ্রামে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ওই গ্রামের রাজমিস্ত্রি মজুর রবিউল ইসলামের মেয়ে শিমু আক্তার (১৬)।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিমু আক্তারের পিতা রবিউল ইসলাম অন্যের সাথে রাজমিস্ত্রীর জোগালির কাজ করছে। বাড়িতে গেলে দেখা যায় শিমু আক্তারের চোখে শুধু পানি। হাউ মাউ করে কাঁদছে। সাথে মা রুবি আক্তার কাঁদছেন। মেয়ের অবুঝ মনকে সান্তনা দেয়ার মতো অসহায়  বাবা মায়ের কাছে কোনো শান্তি বাণী নাই।
মেয়ের এই মানসিক অবস্থা দেখে যেন পুরো বাড়ি শোক সন্তপ্ত হয়ে পড়েছে। অসহায়-দরিদ্র পরিবারে আরও একটি বছর লেখা পড়া চালানো যেন হয়ে পড়েছে গলার কাটা। একদিকে স্বল্প টাকায় সংসার পরিচালনা অন্য দিকে তিন ছেলে-মেয়ের লেখা পড়া চালানো চরম কষ্টকর।
জানা গেছে, ডিমলা উপজেলার খগা বড়বাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মারুফা আক্তার লিজাকে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য নির্ধারিত ১ হাজার ৭০০ টাকায় নির্ধারণ করা স্থলে ২ হাজার ৪০০ টাকা দিয়েছিলে ওই শিক্ষার্থী। পরীক্ষার আগে সবার প্রবেশ পত্র হাতে দেয়া হয়।
শিমু আক্তার রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশ পত্র নেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানে গেলে প্রধান শিক্ষক জানান শিমুর ফরম পূরণ হয়নি। প্রধান শিক্ষকের নিকট এবিষয়ে জানতে চাইলে তালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করেন।
পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ করলে তিনি আশ্বস্থ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে পারবেনা জেনে ওই শিক্ষার্থী ভেঙে পড়ে। গত ৩০ এপ্রিল দিবা গত রাতে একপর্যায়ে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
শিক্ষার্থী শিমু আক্তারের সাথে কথা বলতে গেলে কাঁন্নায় ভেঙে পড়ে বলে, কি কারণে ম্যাডাম আমার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দিলো না? আমি এর বিচার চাই। আমার গরীব বাবা-মা কিভাবে আরও একটি বছর আমার লেখা পড়া চালাবে। সবাই ২ হাজার টাকা দিয়েছে। অথচ আমাকে ২৪০০ টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু কেন? তারপরও কেন আমার ফরম পূরণ হয়নি?
শিমু আক্তারের মা অশ্রু সিক্ত হয়ে জানান, শনিবার থেকে মেয়েটা কান্না কাটি করছে। দুদিন ধরে কিছুই খাচ্ছে না। রাতে রুমে গলায় ওড়না পেচিয়েছিল। ছোট মেয়ের চিৎকার শুনে এসে নামিয়ে নেই। সারা রাত পাহারা দেই। বন্ধু বান্ধব সবাই পরীক্ষা দিতে গেলেও আমার মেয়ে যেতে পারেনি। তার কাছে আর ৬ হাজার টাকা চেয়েছিল ম্যাডাম। কই পাব টাকা?
শিমুর বাবা রবিউল ইসলাম জানান, মানুষের কাছে চেয়ে নিয়ে মেয়ের ফরম পুরণের টাকা দিয়েছি। মেয়েটা ফাঁস দিছিল। কিভাবে বুঝাবো মেয়েটাকে? কেন দিতে দিল না পরীক্ষা? আমার মেয়ের কিছু হলে কে নিবেন দায়? ইউএনও আশ্বাস দিয়েছিল কিন্তু কিছুই হলো না? আমরা গরীব বলে আমরা কি ন্যায় বিচার পাব না?
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, এই শিক্ষক জঘন্য। ইতিপূর্বেও এরকম অনেক কর্মকান্ড রয়েছে। বেশি করে টাকা নেয়া ছাড়াও অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিচার হয়েছে অনেক বার।
ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা যদি কোনো গণ্যমাধ্যম বা কোনো অফিসার এলে তাদেরকে কিছু বললে পরে শিক্ষার্থীদের মারধরসহ বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার করা হয়।
প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তিলক তমা রানী নামে এক শিক্ষককে উপস্থিত পাওয়ার পরে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, সবাই এসেছে কিন্তু বাহিরে গেছে। কতজন শিক্ষক এসেছেন তিনি উপস্থিত সংখ্যা জানেন না। পরে সবাইকে ফোন করে নিয়ে আসেন? প্রধান শিক্ষকের অনুপুস্থিতির বিষয়ে বললে তিনি বলেন, ম্যাডাম বাহিরে গেছেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক দায়িত্বে আছেন।
সহকারী প্রধান শিক্ষক আকমল হোসেন কে ফোন করা হলে তিনি জানান, আমি নামাজ শেষে খাইতে এসেছি। আমি দায়িত্ব প্রাপ্ত সেটা আমি জানি না। মেডাম কখন গেছে সেটাও জানি না। কিছু সময় পরে তিনি উপস্থিত হলে মুভমেন্ট খাতায় প্রধান শিক্ষক প্রবেশের সময় থাকলেও বাহির হওয়ার কোনো সময় পাওয়া যায়নি।
প্রধান শিক্ষক নিয়মিত এভাবেই চলে যান বলে অভিযোগ রয়েছে। দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষককের কোনো স্বাক্ষরও মিলেনি। তাঁর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে আপনারা ওনার (প্রধান শিক্ষকের) কিছুই করতে পারবেননা? ইতোপূর্বেও কত সাংবাদিক এসেছে। মাধ্যমিক অফিসার এসেছে, ইউএনও এসেছে। কোনো কিছুই করতে পারেনি। বরং তারাই সাইলেন্ড হয়েছে। বর্তমান ডিডি স্যার তিনি নিজেই এখানে এসেছিলেন। তিনিও কিছুই করতে পারেননি। প্রধান শিক্ষক আমার বোন হয়। মাঝে মাঝে এমন বিষয় নিয়ে মনমালিন্য হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, ওনার (প্রধান শিক্ষক) স্বামী রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক। সেজন্য মনে হয় কেউ কিছু করতে পারে না। ওনি আসেন ইচ্ছে মতো আর চলেও যান খেয়াল খুশি মতো। আমরা সবাই তার কাছে অসহায়। কেন আপনার অসহায়? এ প্রশ্নের জবাব দিতে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষক। তিনি বলেন আপনারা বুঝে নেন।
একাধিক বার প্রধান শিক্ষক মারুফা আক্তারকে মুঠোফোনে ফোন করলে একবার রিসিপ হলেও তার অফিস সহকারী ফোনে বলেন ম্যাডাম নেই। এটুকু  বলেই ফোনের সুইচ অফ করে দেয়া হয়।
এবিষয়ে ডিমলা উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার আব্দুল হালিম জানান, তার কর্মকান্ডের কারণে একাধিক বার কারণ দর্শানের নোটিশ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। আমাদের কোনো কিছু করার নেই। সবকিছু ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করতে পারেন।
নীলফামারী জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, পরীক্ষার্থীও বলেনি, অভিভাবকও বলেনি বা প্রতিষ্ঠান প্রধান আমাকে জানাননি। আমি একটি পত্রিকায় দেখেছি জেলায় কেন্দ্রে সচিবদের যে মিটিং ছিলো সেখানে বলেছি। তবু সেখানকার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দেখতে বলেছি।
তিনি বলেন, যেহেতু ইউএনও বরাবর আবেদন করেছিল সেহেতু ইউএনও বিষয়টি দেখবেন। ইউএনও যেহেতু সেখানে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী সেখানে তিনি, ফন্ট এ্যাকশনের মাধ্যমে পাঠাবেন। এতে দ্রুত সমাধান আসতো। আমি উপজেলা মাধ্যমিক অফিসারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অবগত করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত। ঘটনার বিস্তারিত জানতে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আপনার যেহেতু জানালেন প্রতিবেদন হাতে পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। (ছবি আছে)


এ জাতীয় আরো খবর
Tech Support By Nagorikit.Com