Logo
ব্রেকিং :
টাঙ্গাইলে ৪৮তম ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস পালিত নাগরপুরে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপি নেতা গোলাম বহিষ্কার জলদস্যুদের  জিম্মিদশা থেকে ছেলেকে ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত নাজমুলের বাবা মা  সিরাজগঞ্জে হিরোইনসহ  এক নারী কারবারী গ্রেফতার  কর্মকর্তাদের অবহেলা টাঙ্গাইলের ১৬ সরকারি অফিসে জাতীয় পতাকা ওড়েনা! নগরকান্দায় শ্রমজীবীদের মাঝে, ছাতা, গেন্জি ও গামছা বিতরণ গোয়ালন্দের পদ্মা-যমুনা নদীতে নৌ-দস্যুতার অভিযোগ জেলেদের  নির্বাচনের আগে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের  গোপন বৈঠকের মাস্টারমাইন্ড  বরখাস্ত  নাগরপুরে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার রাজপথে, প্রতিবাদ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত  সিরাজগঞ্জে খেলতে গিয়ে বালির গর্তে পড়ে দুই শিশুর মৃত্যু 
নোটিসঃ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : আলহাজ্ব এ.এম নাঈমূর রহমান দূর্জয় ,সম্পাদক ও প্রকাশক মো: জালাল উদ্দিন ভিকু,সহ-মফস্বল সম্পাদক মো: জাহিদ হাসান হৃদয়

আর্জেন্টিনার হাহাকার ঘুচিয়ে পূর্ণ মেসি

রিপোর্টার / ৯১ বার
আপডেট সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২

কালের কাগজ ডেস্ক:- ১৯ ডিসেম্বর-২০২২,

গোলের ১২ গজ দূরত্বে বল। কয়েক পা পেছনে গনসালো মন্তিয়েল। একটি দেশ আর কয়েক প্রজন্মের আক্ষেপের ভার কাঁধে নিয়েই শট নিলেন আর্জেন্টিনার রাইটব্যাক। উগো লহিস লাফ দিলেন, কিন্তু ভুল দিকে। সময়কে থামিয়ে দেয়া এক মুহূর্তের জন্ম দিয়ে মন্তিয়েলের শট আশ্রয় নিল জালে। আর বাকিটা? ওই যে বলে না, ইতিহাস!

পেছনে আকাশপানে মুষ্টি ছুড়ছেন মেসি। পারেদেস ঘুরে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরেছেন তাকে। এর চেয়ে আবেগী আলিঙ্গন হয়তো আর হয় না। মন্তিয়েলের শটেই যে নিশ্চিত হলো, মহাকাব্যিক ফাইনালের শেষে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। পূর্ণতা পেল লিওনেল মেসি নামের গল্পটা।

পাগলাটে চিত্রনাট্যের এক ফাইনাল ১২০ মিনিট শেষে ৩-৩ সমতায়। একদিকে দুই গোল মেসির পায়ে। কিন্তু পিএসজি সতীর্থকে ছাপিয়ে অবিশ্বাস্য হ্যাটট্রিকে ফ্রান্সকে টেনে নিয়ে গেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। কিন্তু এমন দুই কূল ছাপানো পারফরম্যান্সের পরও নির্ধারিত সময়ে বিশ্বকাপ বুঝে নেয়া হয়নি দুজনের কারওই।

টাইব্রেকারে এমবাপ্পে ও মেসি নিজ নিজ কাজটা ঠিকভাবেই করেছেন। কিন্তু কিংসলি কোমানের শট ঠেকিয়ে দিলেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস। ফ্রান্সের তৃতীয় শট নিতে যাওয়া অরেলিয়াঁ চুয়ামেনি মারলেন পোস্ট ঘেঁষে। আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় আর তৃতীয় দুই শটই জালে।

চতুর্থ পেনাল্টি নিতে এগিয়ে এলেন কোলো মুয়ানি। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করা মুয়ানি এবার ঠিকঠাক মতো বল জালে রাখলেন। কিন্তু তাতেও কিছু যায়-আসেনি ফ্রান্সের। চাপের মুখে ভেঙে পড়েননি মন্তিয়েল। মেসির আজন্ম লালিত স্বপ্নটা পূর্ণ করে, একটি দেশের ৩৬ বছরের হাহাকার দূর করে ছুটলেন তিনি। ছুটল পুরো দল।

সোনারঙা ১৫ ইঞ্চি ট্রফিটা ধরার একটু আগে থেমেছেন তারা। বহু কাঙ্ক্ষিত ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরলেন মেসি। কত কোটি মানুষ কত দিন ধরে অপেক্ষায় ছিলেন এমন দৃশ্য দেখার। তাদের সঙ্গে অপেক্ষা ঘুচল মেসির। অমরত্ব পাকাপোক্ত করেই তবে বিশ্বমঞ্চ থেকে বিদায় তার।

কিন্তু সে পথে এই ম্যাচের পরতে পরতে এত রোমাঞ্চ, এত টুইস্ট ছড়ানো থাকবে, কে জানত! ম্যাচের শুরু থেকেই দাপট ছিল আর্জেন্টিনার। মনে হচ্ছিল আলবিসেলেস্তেদের কেউই চিত্রনাট্য লিখেছেন। এই দলে বিশ্বকাপ জেতার ইচ্ছাটা সবচেয়ে তীব্র যাদের, যাদের আর কখনো সুযোগ আসবে না, সে দুজন– লিওনেল মেসি ও আনহেল দি মারিয়াই গোল করেছেন প্রথমার্ধে। ৭৯ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে এগিয়ে আর্জেন্টিনা।

সে ম্যাচই ৯০ মিনিট শেষে ২-২! ৯০ বলা হচ্ছে কেন, ৮১ মিনিটেই ২-২! ৭৯ মিনিটে আজীবন গল্প করার মতো এক দৌড় কোলো মুয়ানির। দৌড়ের শেষ পেনাল্টিতে। তা থেকে ফ্রান্সের আশা জাগিয়ে রাখলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ৯০ সেকেন্ড পেরোতে না পেরোতেই ২-২! আরেকটি দুর্দান্ত দৌড়। এবার দৌড়টা এমবাপ্পের বলে সরাসরি গোলও হলো। বিশ্বকাপ ইতিহাস এমন ফাইনাল কবে দেখেছে?

অতিরিক্ত সময়েও নাটকের শেষ নেই। দারুণ দলীয় এক আক্রমণ লওতারো মার্তিনেসের শটে নষ্ট হবে বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু ফ্রান্স গোলকিপার উগো লহিসের ফেরানো বল পড়ল একদম মেসির সামনে। শেষ মুহূর্তে বলে মেসির স্পর্শ, উপামেকানো ফেরানোর আগেই গোল লাইন পেরিয়ে গেছে ৩-২। কিন্তু গল্পের বাকি তখনো।

১১৮ মিনিটে আবার পেনাল্টি। সেখান থেকে গোল করে জিওফ হার্স্টের পর দ্বিতীয় কোনো খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিক এমবাপ্পের।

এমন কিছু যে সেটা প্রথমার্ধ শেষে হবে বললে হাস্যকরই ঠেকত। দি মারিয়া ও মেসি যে একপেশে করে তুলেছিলেন ফাইনালকে। নকআউট পর্বে মাত্র ৮ মিনিট খেলা দি মারিয়া ফাইনালে একাদশে থাকবেন কি না- এ নিয়ে সন্দেহ ছিল। কিন্তু আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার সিদ্ধান্তে লিওনেল স্কালোনি তাকে নিয়েই একাদশ সাজিয়েছেন।

শুরু থেকেই বাঁ প্রান্ত দিয়ে ফ্রান্সকে অস্বস্তিতে রাখছিলেন। মেসিকে নিয়ে রক্ষণের অন্য প্রান্ত ব্যস্ত বলে ফ্রান্স রক্ষণের ডান দিকে ফাঁক বেরিয়ে পড়ছিল। দি মারিয়ার গতি ও চকিত দিক বদলানোর দক্ষতা জুলস কুন্দে ও উসমান দেম্বেলেকে বারবার ঝামেলায় ফেলছিল।

২১ মিনিটে দি মারিয়ার এমনই এক দৌড় পেনাল্টি এনে দিল। দেম্বেলেকে ইনসাইড-আউট করে বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন, পিছিয়ে পড়া ফ্রেঞ্চ উইঙ্গার শেষ চেষ্টা করলেন। তার আলতো স্পর্শে ডি-বক্সে পড়ে গেলেন দি মারিয়া। পেনাল্টি!

পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকের হয়তো আপত্তি থাকতে পারে, কিন্তু আর্জেন্টিনার তাতে বয়েই গেছে। এগিয়ে এলেন মেসি। ফ্রান্স অধিনায়কের সঙ্গে ধৈর্যের পরীক্ষায় নামলেন। শট নেয়ার আগে ইচ্ছা করে অনেক সময় নিলেন, অপেক্ষা করতে করতে এক পর্যায়ে আগেই ঝাঁপ দিলেন উগো লহিস। এবার মেসি শট নিলেন, ঝাঁপিয়ে পড়া লহিসের উল্টো দিকে।

২৩ মিনিটে আর্জেন্টিনার এগিয়ে যাওয়া, ৩৬ মিনিটে দ্বিগুণ হলো ব্যবধান। মাঝমাঠে দায়ত উপামেকানো বল হারিয়ে ফেললে মেসি ফ্লিক করে পাঠান ডান প্রান্তে থাকা আলভারেসের কাছে। আলভারেসের থ্রু ম্যাক অ্যালিস্টারের কাছে। বাঁ প্রান্ত দিয়ে উঠে যাওয়া দি মারিয়ার দিকে পাস বাড়িয়ে দিলেন তিনি। এগিয়ে যাওয়া লহিসের শরীর ওপর দিয়ে জালে বল পাঠিয়ে দিলেন দি মারিয়া।

পিছিয়ে পড়া ফ্রান্স দ্বিতীয়ার্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু তাদের খেলায় কোনো প্রাণই দেখা যায়নি। দ্বিতীয়ার্ধেও দ্বিতীয় সেরা দল হয়ে কাটিয়েছে ফ্রান্স। আক্রমণের মাঝে গিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না দেখে এমবাপ্পে আবার বাঁ প্রান্তে ফিরেছেন। কিন্তু আক্রমণে ধার বাড়েনি ফ্রান্সের। উল্টো আর্জেন্টিনাই গোলের দারুণ সব সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ৬৪ মিনিটে দি মারিয়ার মাঠ ছেড়ে উঠে যাওয়ার পর আর্জেন্টিনার গতি কমে যায়। সর্বনাশ ডেকে আনা সেভাবেই। ৬৭ মিনিট পর্যন্ত কোনো শট না নেয়া ফ্রান্সের ম্যাচে ফেরার শুরুটাও।

আর্জেন্টিনার এগিয়ে যাওয়া যেভাবে, ফ্রান্সের ম্যাচে ফেরাও সেভাবে। বাঁ প্রান্ত দিয়ে মুয়ানি একা বক্সে ঢুকে পড়ছিলেন, বহু চেষ্টাতেও আটকাতে না মেরে ফেলেই দেন ওতামেন্দি। পেনাল্টি থেকে ৮০ মিনিটে ব্যবধান কমিয়ে আনেন এমবাপ্পে।
আর্জেন্টিনা গোল হজমের চমক কাটিয়ে ওঠার আগেই আবার গোল। মেসির পা থেকে বল কেড়ে নিয়েছিলেন কোমান। তার কাছ থেকে রাবিও, আর সে বল এমবাপ্পের কাছে। কোলো মুয়ানির সঙ্গে ওয়ান টু করে বক্সে ঢুকেই শট। মার্তিনেসের বাড়িয়ে দেয়া হাতের স্পর্শ এড়িয়ে বল জালে। ২-২!

অতিরিক্ত সময়ে এমবাপ্পে আরও একবার তার হাতের স্পর্শ এড়িয়ে জালে বল পাঠিয়েছেন। আরও একবার হতাশায় ডুবিয়েছেন মার্তিনেস ও আর্জেন্টিনাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্তিনেসই হেসেছেন বিশ্বজয়ের হাসি। তার গ্লাভসের ছোঁয়াই মেসিকে এনে দিলে বিশ্বকাপ। ২০০৬ সালে শুরু হওয়া গল্পটার পূর্ণতা এনে দিল।


এ জাতীয় আরো খবর
Tech Support By Nagorikit.Com